পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর: ভয়াল কালরাতের সাক্ষী সেই পাগলা ঘণ্টা

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৩, ২১:৪৭

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস

রাজারবাগের পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ঢুকতেই বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। এর ঠিক মাঝ বরাবর গোলাকার দুটি সিঁড়ি নেমে গেছে জাদুঘরের মূল কক্ষে। সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন পুলিশ বাহিনীর নানান স্মৃতিচিহ্ন, অস্ত্র পোশাক-দলিলাদি। আছে বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ব্যবহার করা রিভলভার। পাশেই শোভা পাচ্ছে একাত্তরের ২৫ মার্চ প্রথম প্রতিরোধের রাতে পুলিশ সদস্যদের একত্র করা সেই পাগলা ঘণ্টা। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এমন নান্দনিক দৃশ্য।

পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন এই জাদুঘরে রয়েছে জানিয়ে জাদুঘরের পরিচালক ও পুলিশ সুপার তালেবুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন রাজারবাগের পুলিশ সদস্যরা। তাদের সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে দৃষ্টিনন্দন পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু গ্যালারির দুই পাশে দেয়ালে আছে বঙ্গবন্ধুর নানা সময়ের দুর্লভ সব আলোকচিত্র। পাশে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বইয়ের সমন্বয়ে এক মনোরম লাইব্রেরি। যে কেউ লাইব্রেরিতে বসে বই পড়তে পারবেন। এ ছাড়া এখানে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদানের বিষয়ে লেখা বিভিন্ন বই কেনারও ব্যবস্থা রয়েছে। বই পড়ে অনেকেই ১৯৭১ সালের পুলিশের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা ও বিস্তারিত জানতে পারবেন।

জাদুঘরের মূল কক্ষে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাসের বিশাল সংগ্রহশালা। যত্নের সঙ্গে সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন পুলিশ বাহিনীর নানান স্মৃতিচিহ্ন, অস্ত্র পোশাক- দলিলাদি। এমনকি, বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ব্যবহার করা রিভলভারটিও সংরক্ষিত আছে জাদুঘরে।

জাদুঘরের আরেক কক্ষে রয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল, শহীদ পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত পোশাক, চশমা, টুপি, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণার টেলিগ্রাম লেটার। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আইজিপি আব্দুল খালেকের ব্যবহৃত চেয়ার, যুদ্ধের সময় উদ্ধার করা গুলি ও মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হ্যান্ড মাইক। দূর থেকে শত্রুর অবস্থান দেখার জন্য পুলিশ বাহিনীর সার্চ লাইট, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের টেলিকম ভবনের দেয়াল ঘড়ি, যুদ্ধকালীন পুলিশ সদস্যের বিভিন্ন চিঠিপত্র, ২৫ মার্চ রাতে সারাদেশে পুলিশ সদস্যদের রাজারবাগ আক্রমণের খবর দেওয়া হেলিকপ্টার ব্যাস, বেতার যন্ত্র, ওয়ারলেস সেট, পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবহৃত বেঞ্চ ও প্রথম প্রতিরোধের রাতে পুলিশ সদস্যদের একত্রিত করা সেই পাগলা ঘণ্টা শোভা পাচ্ছে।

জানা গেছে, সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ পুলিশ প্রধান থাকাকালে ২০০৯ সালে তৎকারীন ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহীদুল হকের নির্দেশনায় পুলিশের তৎকালীন ডিআইজি হাবিবুর রহমান (বর্তমানে টুরিস্ট পুলিশ প্রধান) জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। মিলিটারি একাডেমি পরিদর্শন করে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপনের উদ্যোগ নেন হাবিবুর রহমান। ২০১৩ সালে ২৪ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স টেলিকমের ভবনের দুটি রুম নিয়ে প্রথম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি চালু হয়।

সূত্র জানায়, ওই রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে ১৪ হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। অনেকেই শহীদ হন। যাদের সব স্মৃতি আঁকড়ে আছে দৃষ্টিনন্দন এ জাদুঘরে। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্য বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খোলা থাকে। ১০ টাকার বিনিময়ে টিকিট কিনে যে কেউ মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ব্যবহৃত দুর্লভ অস্ত্রশস্ত্র ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো দেখতে পারছেন।

জাদুঘরের পরিচালক ও পুলিশ সুপার তালেবুর রহমান জানান, মূলত মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের বিশেষ করে ২৫ মার্চ রাতে প্রথম প্রতিরোধ কীভাবে করা হয়েছিল, তা সংরক্ষণ করে জাদুঘরে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এদেশের পুলিশ জীবন দিয়ে কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/ডিএম)