কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার টাস্ট্রের এমডির জন্মদিন আজ

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৯:৩২

অধ্যক্ষ প্রতিভা মুৎসুদ্দি

আজ শুভ ২৬ শে মার্চ। ১৯৬৮ সালের এই দিনে সিলেটের স্বনামধন্য বিমলেন্দু দাস ও অরুণিমা দাসের বাড়ি আলোকিত করে রাজীবের জন্ম হয়। হিন্দু সমাজের রীতি কন্যার প্রথম সন্তানের জন্ম হবে বাবার বাড়িতে- যাতে কন্যা বহু যত্ন-আদরে থেকে সন্তানের জন্ম দিতে পারে।

এই রীতি দানবীর রণদা প্রসাদ ও মেনে নিলেন। পৌত্রের জন্ম সংবাদ পুত্র ভবানী প্রসাদকে জানালেন। সপ্তাহান্তে মির্জাপুর এসে আমাকে বললেন, "মা, আনন্দ করো- আনন্দ করো। এ শিশুর জন্ম সর্বসিদ্ধি ত্রয়োদশী তিথিতে। এ শিশু অনেক বড় হবে- অনেক কল্যাণ কাজ করবে।" 

আমি ভাবলাম- পিতামহের জন্মদিন উত্থান একাদশীতে আর পৌত্রের জন্মদিন "সর্বসিদ্ধি ত্রয়োদশীতে"- এ সোনায় সোহাগা। পৌত্র পিতামহের যোগ্য উত্তরসূরি হবে। এ শিশুর জন্মের সংবাদে সারা কুমুদিনী ও মির্জাপুর গ্রাম আনন্দে আত্মহারা। 

তিন মাস পর তার ছোট পিসি জয়া পতি বিলেত থেকে দেশে এলে এ শিশুকে মির্জাপুর আনা হয়। তার নামকরণ করেন তার পিতা ভবানী প্রসাদ সাহা (রবি)। "ওর নাম হবে- রাজীব প্রসাদ সাহা।" আমি বললাম- রাজীব লোচন অর্থপূর্ণ হয় প্রসাদ তো খাটে না।" রবি বলল- অত শত বুঝি না। রাজীব প্রসাদ সাহা- দ্বিতীয় আরপি সাহা। আরপি সাহা- চিরদিন বেঁচে থাকবে।"

মহানন্দে শিশু চন্দ্রকলার মতো বাড়তে লাগলো। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধিকার অর্জনের জন্য পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু হয়। পাকিস্তান সরকারের বিপক্ষে সংগ্রাম চূড়ান্ত হয়, ১৯৭১ এর ৭ ই মার্চ রেসকোর্সের মাঠে কোটি কোটি জাগ্রত জনতার জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের আহ্বানে জাগ্রত জনতার মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলার বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও জাগ্রত সমাজ নিধনের যজ্ঞ শুরু করল। ৭ই মে শুক্রবার মির্জাপুরে গণহত্যা চালিয়ে রাত ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, ভবানী প্রসাদ সাহা, গৌর গোপাল সাহা, দারোয়ান ও গরুপালক মতলবকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসেননি। এক সাগর মুক্তিযোদ্ধার রক্তের স্রোতে তাদের রক্ত মিশে যায়।

দানবীরের কনিষ্ঠ কন্যা জয়াপতি দুর্দশাগ্রস্ত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের হাল ধরেন। কুমুদিনীর সকল কর্মকর্তার সহযোগিতায় সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে মা কিরণ বালা সাহা, শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহার কিশোরী স্ত্রী শ্রীমতী সাহা ও তার শিশুপুত্র রাজীবকে সযত্নে লালন পালন করেন। শ্রীমতী সাহা ও রাজীবকে গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে ট্রাস্টের কর্ণধার তৈরি করেন।

১৯৭১-১৯৯৯ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে কুমুদিনীর সকল প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস্, কুমুদিনী কলেজ চালিয়ে নারী উন্নয়নের জন্য কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফটস, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল, কুমুদিনী গার্মেনটস, কুমুদিনী ফার্মা ও কুমুদিনী ট্রেড স্কুল (দরিদ্র ছেলেদের জন্য) প্রতিষ্ঠা করেন। এই অক্লান্ত পরিশ্রমে স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি ১ জানুয়ারি ২০০০ সালে রাজীব প্রসাদ সাহাকে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত করেন। 
রাজীব প্রসাদ সাহা ২০০০ সাল থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কুমুদিনী সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে ২০০১ সনে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুলকে কুমুদিনী নার্সিং কলেজে উন্নীত করেন ২০০৭ সালে, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায়।

কুমুদিনী মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (দক্ষ স্বাস্থ্য কারিগর তৈরির জন্য) স্থাপন করেন মির্জাপুরে ২০১৯ সালে। এখন তার পরিকল্পনায় আছে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স এবং ক্যান্সার রিসার্চ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল এন্ড কলেজ, কেয়ার গিভিং নার্সিং ট্রেনিং যাতে সব মানুষই সেবা পায়। 

তার সকল কাজে পাশে আছেন তার মা শ্রীমতী সাহা, তার সহধর্মিনী শম্পা সাহা এবং তার সকল প্রতিষ্ঠানের  প্রধান ও বড় ছোট সকল কর্মী। সকলেরই একই লক্ষ্য দেশের মানুষের সেবা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে।

রাজীব প্রসাদ সাহার শুভ জন্মদিনে আমরা সবাই প্রার্থনা করি- তিনি যেন সুস্থ শরীরে সুষ্ঠু মনে শতায়ু হয়ে সুখে ও শান্তিতে সৌরভে আর গৌরবে জীবন ধন্য করতে পারেন। 

জয়তু রাজীব প্রসাদ সাহা
জয়তু কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট
শুভ জন্মদিন! শুভ জন্মদিন!! শুভ জন্মদিন!!!
স্নেহের রাজীব! 

লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতিভা মুৎসুদ্দি 
পরিচালক (শিক্ষা), কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার টাস্ট্র।