বিজিবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস পালিত

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২৩, ২১:৫৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে। স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে রবিবার প্রত্যুষে পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবির সকল ইউনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বিজিবি সদর দপ্তরে কর্মরত সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে পিলখানার সীমান্ত গৌরব-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বিজিবির একটি সুসজ্জিত চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। রবিবার ভোরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক অংশ নেন।

দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ফজর নামাজের পর পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবির সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের মসজিদসমূহে জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শাহাদতবরণকারী সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মার শান্তি এবং বিজিবির উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও একাত্মতা কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পিলখানার কেন্দ্রীয় মসজিদে বিজিবি মহাপরিচালকসহ বিজিবির সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ মোনাজাতে অংশ নেন। দিবসটি উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিজিবি সদস্যদের মাঝে উন্নতমানের ইফতার ও খাবার পরিবেশন করা হয়।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশে বিজিবির বিভিন্ন স্থাপনায় স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। বিজিবি সদর দপ্তর, পিলখানার সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সকলের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫’র ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণকারী তার পরিবারের সকল সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদ এবং বিজিবির দুজন বীরশ্রেষ্ঠসহ আত্মোৎসর্গকারী ৮১৭ জন বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আজ বাঙালি জাতির জন্য একটা গর্বের দিন। আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিজিবির মতো ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনীর জন্যও দিনটি অত্যন্ত গর্বের। সেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই মহান বাণী আপামর জনসাধারণকে জাগ্রত করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা।

এ কে এম নাজমুল হাসান বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান সংকট সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্য অগ্রযাত্রায় সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পবিত্র রমজান মাসে সংযম পালন, ব্যয় সংকোচন ও কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এবার গণভবনে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই কৃচ্ছ্রসাধন নীতির সাথে একাত্মতা পোষণ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)ও পিলখানায় অনুষ্ঠিতব্য ইফতার পার্টি স্থগিত করেছে এবং মাসব্যাপী গরিব ও দুস্থদের মাঝে ইফতারি বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বিজিবি আজ সারাদেশে ১০টি শহরের গরিব ও দুস্থদের মাঝে ইফতারি বিতরণ করেছে। শুধু রমজান মাসেই নয়, বিজিবির এই মহতী উদ্যোগ সারা বছরব্যাপী চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, 'সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী' বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সবসময়ই অগ্রভাগে থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিজিবি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে-এটাই হোক আজকের দিনের শপথ। তিনি ব্যক্তি স্বার্থকে উর্ধ্বে রেখে সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণে এবং বিজিবির সমৃদ্ধি ও সুনাম বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল, বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ও আখাউড়া-আগরতলা আইসিপিসমূহে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ জমকালো যৌথ রিট্রিট সিরিমনি প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। ওই যৌথ রিট্রিট সিরিমনি প্যারেডে বিজিবি-বিএসএফের কর্মকর্তারা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত শিশুদের জন্য বিজিবি জাদুঘর উম্মুক্ত রাখা হয়। সন্ধ্যার পর পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে সীমিত আকারে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

এর আগে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জঘন্যতম নারকীয় গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মরণ ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে এশার নামাজের পর বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয় এবং জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাতে এক মিনিট বিজিবি সদর দপ্তরসহ সকল রিজিয়ন, সেক্টর এবং ইউনিটে প্রতীকী ব্ল্যাক আউট পালন করা হয়।    

(ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/এএ/এলএ)