ক্ষমতা প্রদর্শনের বিদঘুটে প্র্যাক্টিস বন্ধ হোক

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৪ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৭

সানী সানোয়ার

সরকারি চাকরি করি বলে অপরিচিত জায়গায় পরিচয় গোপন রেখেই মেশার চেষ্টা করি। এমন কি ট্রাফিক পুলিশের কাছেও সচরাচর নিজের পরিচয় দেই না। কারণ, এক্সট্রা খাতির ভালো লাগে না। অর্গানিক খাতিরেই তৃপ্তি বেশী। চাকরি আজ আছে তো কাল নেই। তাই, মানুষ হিসেবে ব্যক্তি আমার গ্রহনযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা অনেক জরুরি।

 

আরও কিছু বিষয় আছে। অনেকেই আছেন যারা সরকারি চাকুরেদের পছন্দ করেন না। এই অপছন্দের কারণ বহুবিধ। তার মধ্যে একটা হচ্ছে - টিপিক্যাল ক্ষমতা প্রদর্শন, আরেকটা হচ্ছে - রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী। যে যেভাবেই ভাবুক না কেন আমি অন্যের অপছন্দের তালিকায় পড়তে অনিচ্ছুক। তাই প্রি-সেট মাইন্ডের জাজমেন্টাল এটিচিউড এড়িয়ে চলতে নিজের পেশাটা যতটুকু সম্ভব গোপনই রাখি।

 

অবশ্য, মাঝে মাঝে গোপন রাখাটা দায় হয়ে যায়। মানুষজন খুটিয়ে খুটিয়ে বের করে ছাড়ে আমি কি করি, কোথায় আছি? আবার, বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে কণে/বর পক্ষ নিকটাত্মীয়ের ক্ষমতা দেখাতে বলে থাকেন

 

-ওনি আমার অমুক হোন। পুলিশে আছেন। অনেক পাওয়ারফুল।

 

ব্যস, শুরু হয়ে গেল ক্ষমতা প্রদর্শনের পালটা জবাব। শ্রোতা ছলেবলে কৌশলে এমন কারো নাম হাজির করবেন যিনি পদ বা ক্ষমতায় আমার থেকেও অনেক উচ্চে। তখন মুচকি হেসে শুধু বলি

 

-জি, তিনি আমার স্যার, আমার অনেক সিনিয়র।

 

সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতা পছন্দ করেন না এমন অনেককেই দেখেছি ট্রাফিক সার্জেন্টকে পরিচিত কোন  সরকারি কর্মকর্তা বা ক্ষমতাধর কারো ক্ষমতা দেখিয়ে অপদস্ত করতে। ভীষণভাবে লাঞ্চিত করতেও দেখেছি।

 

এরকম উদাহারণ ভুড়িভুড়ি। যতটুকু বুঝেছি ক্ষমতা এমন একটা জিনিস যেটা আয়ত্বে থাকলে উত্তম, দুরত্বে থাকলেই হয়ে যায় অধম।

 

অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা আছেন যারা নিভৃতে জীবন-যাপন করছেন। বুঝার উপায় নেই তাদের পদ-পদবি কি। সেবাই যেন তাদের ব্রত। অলওয়েজ ডাউন-টু-আর্থ। এই সংখ্যাটা কিন্তু বেশ ভালোই। তাই, সরকারি কর্মকর্তাদের সম্বোধন ইস্যুতে দু'একজন কর্মকর্তার মানদন্ডে যেন লাখো সরকারি কর্মকর্তার স্বভাব  না মাপা হয়।

 

মোদ্দাকথা, সমাজে সর্বক্ষেত্রে সময়ে-অসময়ে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সকলের মধ্য ক্ষমতা প্রদর্শনের বিদঘুটে প্র‍্যাক্টিস বন্ধ হোক - এটাই কাম্য।

 

লেখক: পুলিশ সুপার