বেশি লাভে মুরগি বিক্রি, ভোক্তার অভিযানে বন্ধ হলো আড়ৎ

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৫:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বেশি লাভে মুরগি বিক্রি করার কারণে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে আড়ৎ বন্ধ করে দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে সোনালী মুরগি ২৮৫ টাকা কেজি দরে কিনে ৩৩৫ টাকায় বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়।

সোমবার সকালে রাজধানীর অন্যতম বড় এই পাইকারি বাজারে অভিযান পরিচালনাকালে জনতা হাঁস মুরগির আড়ৎ সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিন ভোক্তার অভিযানে জাকারিয়া নামের ওই আড়তের এক প্রতিনিধিকে (লাইনম্যান) বাজার মালিক সমিতির হেফাজতে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মুরগির দাম নিয়ে কারসাজির ব্যাখ্যা দিতে ওই প্রতিনিধিসহ বাজার মালিক সমিতির নেতাদের আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ডাকা হয়।

এছাড়া ক্রয় রশিদ না থাকা ও বেশি দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করায় আল আমিন ট্রেডার্স নামের একটি দোকানকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেছে সরকারি এই তদারকি সংস্থাটি।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ)  মুরগি উৎপাদনকারী বড় চার প্রতিষ্ঠান (সিপি, আফতাব, কাজী, প্যারাগন) ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এসে ব্রয়লার মুরগি মিল পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির ঘোষণা দেয়। এর ভিত্তিতে শুক্রবার ও শনিবার দেশব্যাপী তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।

কিন্তু আজ কাপ্তান বাজারে তদারকি করে দেখা গেছে, পাইকারি যে দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হওয়ার কথা সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। কেউ ১৭০ টাকা, কেউ ১৭৫ টাকা করে ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন। এই দামে কিনলে কত টাকা করে বিক্রি করা যায় তা আমরা বিক্রেতাদের কাছে জানতে চেয়েছি। কেউ বলেছেন ১৯০ টাকা, কেউ বলেছে ১৮৫ টাকা করে বিক্রি করা যায়। কিন্তু বাজারে ১৯০ টাকা করে কোথাও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে না। এ জন্য আমরা বাজার সমিতিকে ডেকেছি এবং তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি।

তিনি আরও বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম অনেকটা কমে এলেও সোনালী মুরগির ক্ষেত্রে এখনো অস্থিরতা রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে কোনো ব্যবসায়ী ৩৩৫ টাকা কেজিতে সোনালী মুরগি বিক্রি করছেন, কেউ ৩৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। আবার একই মুরগি কেউ ৩৩০ টাকায় বিক্রি করছেন।

এ জন্য আমরা মুরগি আড়ত তদারকি করতে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা অনিয়ম পাওয়ায় এটি আড়তকে সমায়িকভাবে বন্ধ করেছি। পাশাপাশি ওই আড়তের একজন প্রতিনিধি, যাকে ব্যবসায়ীরা লাইনম্যান বলেন, তাকে আমরা সমিতির হেফাজতে রেখেছি। আজ সোমবার দুপুর ২টায় ওই লাইনম্যানসহ সমিতির নেতাদের আমরা আমাদের অফিসে ডেকেছি। এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেবেন।

ওই আড়তের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক আরো বলেন, ওই লাইনম্যান ক্রয় রশিদ রাখেনি। আমরা বারবার বলছি, ক্রয় রশিদ এবং বিক্রয় মূল্য থাকতে হবে। আমরা পাইকারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ২৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত সোনালী মুরগি কিনেছেন। এখন সেই মুরগি ১০ টাকা লাভে বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ৩১০ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু ওই আড়তে ৩৩০ থেকে ৩৩৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এটা ব্যবসায়ীদের নৈতিকতাবিরোধী। তাই তাদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে আমরা আমাদের অফিসে ডেকেছি।

ব্যাপারী ও আড়তদারদের কারসাজি ভোক্তা অধিদপ্তরের চোখে পড়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তারা ক্রয় রশিদ দেন না। কেউ যদি ক্রয় রশিদ ও বিক্রয় মূল্য না দেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন আনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও বাজার অস্থিতিশীল হলে সেসব প্রতিষ্ঠান সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার বিধান রয়েছে। এরপরও অনিয়ম করলে অভিযুক্তকে আটক করে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আরও বলেন, বাজারকে অস্থিতিশীল করে ভোক্তার পকেটের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এই প্রবণতা থেকে সবাই বের হয়ে আসেন। বাজার চলবে চাহিদা ও সরবরাহের উপর। আমাদের পণ্যের সরবরাহ এখন পর্যাপ্ত। সেক্ষেত্রে পণ্যের দাম নিয়ে এমন কারসাজি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কোনোভাবেই মেনে নিবে না।

তিনি আরও বলেন, এবার আমাদের অভিযানের কাঠামো কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা বাজার পরিস্থিতর জন্য সমিতির দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ব্যবসায়ীরা লাভ করুক, সেটা আমরাও চাই। কিন্তু সেটা ভোক্তার পকেটের টাকা কেটে যেনো না করা হয়।

এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডলসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭মার্চ/কেআর/এসএম)