ক্লান্তি ছাপিয়ে ইবি ক্যাম্পাসে প্রাণবন্ত ইফতার

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৩, ২২:১৬

ইবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

একটি পড়ন্ত বিকাল। সারি সারি গাছের ফাঁক দিয়ে তাকালে দেখা যায়, সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। চারপাশের সবুজ গাছপালার ছায়ায় ক্যাম্পাসের মাঠ আচ্ছাদিত। নিরুত্তাপ রোদ মনে করিয়ে দেয় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ক্যাম্পাসের মাঠে ঠিক এমন গোধূলি বেলায় শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা।

এতদিন মাঠে বল, ব্যাট হাতে ছোটাছুটি দেখা গেলেও এখন ভিন্ন চিত্রের দেখা মিলছে। সবুজে আচ্ছাদিত মাঠে ছেড়া পত্রিকা কিংবা ব্যানার বিছিয়ে গুঁটি হয়ে বসে আছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সামনে শরবত, ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, ঘুগনি, ছোলা বুট, বেগুনি, খেজুর ও জিলাপি। এভাবেই ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

বলছিলাম, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ক্রিকেট মাঠটির কথা। শারীরিক কসরত, খেলাধুলা, আড্ডায় মুখরিত মাঠটিতে মাহে রমজানে ভিন্ন আমেজ বিরাজ করছে। সাদ্দাম হলের সামনের সবুজ মাঠজুড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ শিক্ষার্থীদের দল। রমজানের ইফতারের আয়োজনে ব্যস্ত তারা। ঘড়ির কাটার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলছে ইফতার পরিবেশনের কাজ। চারদিকে ছুটাছুটি আর স্বাদের ইফতার তৈরির হিড়িক। একে অপরের প্লেটে কেউ ছোলা দেন তো কেউ পেঁয়াজু, আলুর চপ আবার কেউ কেউ গ্লাসে গ্লাসে দেন বাহারি রঙের শরবত।

তবে চৈত্র মাসের সারাদিনের খরতাপ শেষে গোধূলি বেলায় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারে যেন এক চিলতে প্রশান্তি মেলে। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে এ যেন পরম প্রশান্তি এনে দেয় শিক্ষার্থীদের। তাই তারা দল বেঁধে ছুটে আসেন ক্যাম্পাসের এই সবুজ গালিচায়।

১৭৫ একরের সবুজ ক্যাম্পাসের ছোট এই সবুজ গালিচায় কোথাও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজন। আবার কোথাও জেলা ও বিভাগভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর আয়োজন। এছাড়াও দেখা মেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন দলের। তারা সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের সঙ্গে এক হয়ে করছে ইফতারের আয়োজন। এভাবেই শিক্ষার্থীরা ইফতারের মধ্যে খুঁজে ফিরছে তৃপ্তির ছোঁয়া। এই প্রিয়জনগুলো যেন তাদের দ্বিতীয় পরিবার।

অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেও ক্যাম্পাসের ইফতার হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য উপমা। বন্ধুদের সাথে বসে ইফতার করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পঙ্কজ দাস।

মুখভর্তি ছোলা-মুড়ি নিয়েই গড়গড় করে বললেন, ‘বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে ইফতার করছি। ছোলা-মুড়ি খেতে আমার বেশ ভালো লাগে। সবাই মিলে একসাথে ভালো সময় কাটে।’

তবে ইফতার আয়োজন শেষে ঘড়ির কাটার দিকে নজর থাকে সবার। টিক টিক শব্দের সঙ্গে সময় ফুরিয়ে আসে অন্তিম মুহূর্তের দ্বার। মসজিদের মুয়াজ্জিনের মধুর কণ্ঠে আজানের ধ্বনিতে শুরু হয় ইফতার। সবার মুখে হাসি ফুটে, পাশাপাশি বসে তারা করে তৃপ্তির ইফতার।

ক্যাম্পাসে ইফতারের অনুভূতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফ উদ্দীন নিজাম বলেন, ক্রিকেট মাঠে বসে ইফতার করায় এক রকমের প্রশান্তি আছে। বন্ধুদের সঙ্গে এক হয়ে ইফতার করলে পরিবারের কথা একটু হলেও ভুলে থাকা যায়। সবার সঙ্গে ইফতার করলে মনে হয় এটাই আমার দ্বিতীয় পরিবার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব বিশ্বাস বলেন, ক্যাম্পাসের ইফতারে আমাদের প্রাণের সঙ্গে প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্যাম্পাসের ইফতারে তৃপ্তি খুঁজে পাই। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডামুখর ইফতারে এক ভিন্ন অনুভূতি জাগ্রত হয়। এভাবেই আমরা সম্প্রতির বন্ধনে আবদ্ধ হই।

(ঢাকাটাইমস/২৭মার্চ/এলএ)