বাজেট ২০২৩-২৪: ভর্তুকি এক লাখ কোটি টাকার নিচে রাখার চেষ্টা

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৩, ১১:০১ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে যাচ্ছে সরকার। এর আকার এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে রাখা হতে পারে। প্রাথমিকভাবে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকির প্রাক্কলন করা হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে এর পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভর্তুকি কমানোর উপায় হিসেবে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরেই মোট তিন দফায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী জুনের আগে আরও দুই থেকে তিন দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে। এই দাম বাড়ানোর কারণে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসবে। একই সাথে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনার পরিমাণ আগামী বাজেটে কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ফলে ভর্তুকির অঙ্কও কমে যাবে বলে মনে করছেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ দেওয়া রয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ভর্তুকির পরিমাণ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে।
এখন আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি বরাদ্দ নিরূপণ করতে গিয়ে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা এ খাতে বরাদ্দ সহনীয় করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ডিসেম্বরে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দের প্রাথমিক একটি প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সেটি আকার ছিল এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

অন্যদিকে প্রণোদনার অর্থ কিছু কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এ খাতে বরাদ্দ এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করছি। 

তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবেও ভর্তুকি কমিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে বিদ্যুৎ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা। গেল অর্থবছরে যা ছিল ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। চলতি বছরে এলএনজি (আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা (গত বছর একই পরিমাণ অর্থাৎ ৬ হাজার কোট টাকা বরাদ্দ ছিল)। খাদ্য খাতে ভর্তুকি রয়েছে ৫ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা (গত বছর ৪,৬৪১ কোটি টাকা)। কৃষি খাতে ভর্তুকি ১৬ হাজার কোটি টাকা (গত বছর ১৫,১৭৩ কোটি টাকা)।

টিসিবি ও অন্যান্য খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রণোদনা (রপ্তানি ও রেমিট্যান্স) ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ১৩,২০০ কোটি টাকা) এবং নগদ ঋণ খাতে এবার ভর্তুকি রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।

অর্থবিভাগের একটি সূত্র জানায়, গত ২০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ভর্তুকি অতিরিক্ত চাপের বিষয় নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাম বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এত চাপ অর্থনীতি সহ্য করতে পারবে না। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে ভর্তুকি হ্রাস টেনে ধরা হবে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছরই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যেমন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯- ২০২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০১৭-২০১৮) বাজেটে, ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

(ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/আরআর/আরকেএইচ)