নওগাঁয় নারীর মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল র‌্যাব

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৩:২৫ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪:৫৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নওগাঁয় র‍্যাবের হাতে আটকের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু ও র‌্যাব সদস্যদের কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, 'রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে, ফেক আইডি ব্যবহারে তার নামে চাকরি দেওয়া ও বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। তিনি ২০২২ সালের মার্চে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। একজন নারী তার নামে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলাও করেন। গত ১৯ ও ২০ মার্চ নিজ কার্যালয়ের সামনেই তার নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র অর্থ প্রতারণা করে। এই খবর পেয়ে খোঁজ নেন যে প্রতারণায় আল আমিন নামে একজনের যোগসাজশ রয়েছে। এরপর তিনি খবর পান জেসমিন নামে এক নারীর নাম।

তিনি অফিসে যাবার পথে র‌্যাবের টহল টিমকে অভিযোগ করেন। তার সামনেই অভিযুক্ত নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদকালে নারী সদস্যরা ছিলেন। সাক্ষী অভিযোগকারী এনামুল হকও ছিলেন।

সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদকালে আটক জেসমিন অকপটে সব অভিযোগ স্বীকার করেন। তার মোবাইলে চলমান অবস্থায় এনামুল হকের নামে খোলা ফেক ফেসবুক আইডি দেখা যায়। মোবাইলে আমরা সোনালী ব্যাংকের একাউন্টের তথ্য পাই।

মঈন বলেন,  সেখানে লাখ লাখ টাকা জমা রশিদের তথ্য পাই। পরবর্তীতে সাক্ষীদের সম্মুখে তাকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আটক করা হয়। এরপর জব্দ আলামত নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্ট করা হয়। সেখান থেকে থানায় মামলার উদ্দেশ্যে যাবার পথে ওই নারী অসুস্থবোধ করেন। তখন র‌্যাব মামলার চেয়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়াকেই অধিক গুরুত্ব দেয়।'


কমান্ডার মঈন বলেন, র‌্যাব শুধু না, প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সিরিয়াস। আমরা ওই নারীকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নিজে নেমে হেঁটে হাসপাতালে ঢোকেন। তার আত্মীয়স্বজন ও এসিল্যান্ডসহ ভূমি অফিসের তার সহকর্মীদের খবর দেওয়া হয়।
সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্ট্রোক সন্দেহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে সিটি স্ক্যানে স্ট্রোকের আলামত আসে। তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

কমান্ডার মঈন বলেন, ওই নারী কি কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন তা কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, ডেথ সার্টিফিকেটে তা উঠে এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারমিশন লাগে। ভুক্তভোগী যুগ্ম সচিব এনামুল হক অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

যেহেতু অভিযোগ উঠেছে জেসমিন নামে ওই নারী র‌্যাব হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এখানে র‌্যাব সদর দপ্তরের পক্ষে আমাদের ইনকোয়ারি সেল রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্তে দেখা হচ্ছে কারও কোনো ধরনের অবহেলা, গাফিলতি বা যোগসাজশ কিংবা অনৈতিক কিছু ছিল কি না! তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে অতীতের ন্যায় চাকরিচ্যুতিসহ কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কারও অবহেলা বা গাফিলতি র‌্যাব পেয়েছে কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, এটা এখনই বলার মতো সময় আসেনি। মেডিকেল রিপোর্টে সব ক্লিয়ার। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি তদন্তে যদি কারও কোনো ধরনের গাফিলাতি পায় তাহলে অবশ্যই আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

(ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/এসএস/এআর)