আ.লীগের নির্দেশনা মতো তৃণমূল গোছাতে পারেনি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম ৫ সংগঠন

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৩ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৩

জাফর আহমেদ, ঢাকাটাইমস

সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম পাঁচ সংগঠন আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মতো তিন বছরেও তৃণমূল গুছিয়ে আনতে পারেনি। সংগঠনগুলোর বর্তমান নেতৃত্ব তিন বছরের বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালিয়ে এলেও তাদের সাংগঠনিক অর্জন নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে হচ্ছে আলোচনা।

আওয়ামী লীগের এই সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম পাঁচ সংগঠন হলো, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবি লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ। পাঁচটি সংগঠনেরই কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ গেছে গত ডিসেম্বরে।

এই পাঁচ সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়া নেতারা বলছেন, সকল মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলার কমিটি করে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে কাজ করা হচ্ছে। তবে সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহণের পরে নানা প্রতিশ্রুতির কথা বলেছিল এসব সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাদের কথা অনুযায়ী এসব সংগঠনের নেতারা কতটা সংগঠনকে সুসংগঠিত করে এগিয়ে নিতে পেরেছেন বা তাদের কথা সঙ্গে কাজের মিলই রেখেছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ যে নিদের্শনা দিয়েছিল নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে, সেই নিদের্শনা কতটা ব্যস্তবে রূপ দিতে পেরেছে এই নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যেও এখন আলোচনা চলছে।

এই বিষয় নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবি লীগ, শ্রমিক লীগ ও যুবলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে ঢাকা টাইমসের কথা হয়। এসব সংগঠনের অনেক নেতারা জানেনই না তাদের সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কয়টির সম্মেলন হয়েছে; কয়টির কমিটি দেওয়া হয়েছে। কবে নাগাদ সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ করতে পারবে এই প্রশ্নের উত্তরও তাদের জানা নেই।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পাঁচ সংগঠনের মধ্যে শুধু স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৯টি বাকি চার সংগঠনের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এরমধ্যে এসব সংগঠন হাতে গণা কয়েকটি জেলার সম্মেলন করে কমিটি করতে সক্ষম হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৭৯টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ২৩ জেলার, কৃষক লীগ ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১৪টি, জাতীয় শ্রমিক লীগেরে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৮টি, যুবলীগ ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১২টি, মৎস্যজীবি লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩০টি জেলার সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলন করা জেলার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে অর্ধেকের কম।

গড় অনুপাতে এই পাঁচটি সংগঠন তিন বছরে তিনভাগের একভাগ কাজও করতে পারেনি। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ কাজই শেষ করতে চায়।

মৎস্যজীবী লীগের নেতারা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেই ২৫টি জেলার সম্মেলন করা হয়েছে। ইতিহাসে কোনো সংগঠনে এক থেকে দেড়মাসে ২৫টি জেলার সম্মেলন করা হয়নি। এবারই প্রথম মৎস্যজীবি লীগে এমন সম্মেলন হয়েছে। এসব কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করার অভিযোগ তুলেছেন মৎস্যজীবি লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন বক্তব্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বলেছেন কিন্তু সেই নিদের্শনা মোতাবেক সংগঠনকে কতটা শক্তিশালী করেছে এবং সংগঠনকে এগিয়ে নিয়েছে। নিদের্শনা অনুযায়ী তেমন কিছু করতে পারেনি এসব সংগঠনের নেতারা।

কারণ, এসব সংগঠনের সারাদেশের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা থাকলেও তার মধ্যে একভাগ কাজও করতে পারেনি। তাই তৃণমুল নিয়ে আওয়ামী লীগের যে আশা ছিল সেখান থেকে ঢের পিছিয়ে। এজন্য আওয়ামী লীগের বিভাগীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেছবাউল হক সাচ্চু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সম্মেলন হয়েছে অনেক জেলায়, কিন্তু নিদিষ্ট করে বলতে পারবো না। কারণে আমাদের সংগঠনের কাজ হচ্ছে নিচে থেকে ওপর দিকে। আমরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানার কমিটি করে তারপর জেলার কমিটি করব। তাই কয়টি জেলার কমিটি হয়েছে তা অফিসের ফাইল দেখে বলতে হবে। আমাদের সাংগঠনিক জেলা ৭৯টি।

কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক ৭৮টি জেলার মধ্যে কয়টি জেলার সম্মেলন হয়েছে সব তো মনে নেই। তবে ১৪টি থেকে ১৬টি জেলার সম্মেলন হয়েছে এরমধ্যে কয়েকটি জেলার কমিটিও দেওয়া হয়েছে।

মৎস্যজীবি লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সাব্বির ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি কোনো তথ্য দিতে পারবো না। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের তথ্য দেওয়া নিষেধ আছে। আপনি অফিসে আসেন তথ্য পাবেন। এরপরে মৎম্যজীবি লীগের অফিসে গেলে অফিস তালা মারা পাওয়া যায়। তাকে একাধিক বার ফোন দিলেও পরবর্তীতে সাব্বির আর ফোন ধরেননি।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আজগর নস্করকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান ঢাকা টাইমসকে বলেন, সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়া জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি এরমধ্যে ৫ থেকে ১০টি জেলার সম্মেলন হয়েছে কয়েকটির কমিটিও করা হয়েছে। বাকি গুলোর সম্মেলন করার জন্য কাজ চলছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক যা শুরু করেছে যেই বিতর্ক তাকে নিয়ে তাতে সাংগঠনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

যুবলীগের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১২টি জেলার সম্মেলন হয়েছে এরমধ্যে ৮টি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি সম্পন্ন হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/ডিএম)