সৌদিতে নিহত রুহুলের পরিবারে চলছে শোকের মাতম

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৫:৫১

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মাত্র সাত মাস আগে পরিবারের সুখের আশায় সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিল মাদারীপুরের রুহুল আমীন। অভাব অনাটনের সংসারে ধার-দেনা করে গিয়েছিলেন প্রবাসে। কিন্তু সেই ঋণ শোধ করার আগেই সৌদিতে বাস দুঘর্টনায় মারা গেছেন রুহুল আমীন। এতে রুহুলের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। দুই সন্তান, স্ত্রী আর বিধবা মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে পুরো এলাকা।

পরিবারের দাবি, সরকারি সহযোগিতায় যেন রুহুলের মৃতদেহ দেশের মাটিতে দাফন হয়। সেই সঙ্গে ঋণ পরিশোধে সাহার্য্য কামনা পরিবারটির। প্রশাসনও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।

সোমবার (২৭ মার্চ) সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আবহা এলাকায় ব্রেক ফেল করে সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে যাত্রীবাহী বাস উল্টে যায়। এতে বাসটিতে আগুন ধরে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে রুহুল আমীন মারা যান। প্রথমে পরিবার বিষয়টি না জানলেও (২৯ মার্চ) গণমাধ্যমে রুহুলের নাম দেখে খোঁজ পান তারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, অটোবাইক চালিয়ে সংসার চালাতো মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের দিয়াপাড়া গ্রামের রুহুল আমীন মাতুব্বর (৩৪)। একটু সুখের আশায় ধার দেনা আর জমানো কিছু টাকা মিলিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময় গত বছরের ২ জুলাই সৌদি যান তিনি। সেখানে আবা জেলার খামিজ শহরের একটি ভাতের হোটেলে ২৮ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। কিন্তু এখনো ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। সেখান থেকে সোমবার সকালে রুহুল ওমরা হজ্জ পালনের উদ্যেশ্যে রওনা হয়। পরে সৌদির আসির প্রদেশের আবহা এলাকায় ব্রেক ফেল করে সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে যাত্রীবাহি সেই বাসটি উল্টে যায়। এতে বাসটিতে আগুন ধরে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে রুহুল আমীন মারা যায়। প্রথমে পরিবার বিষয়টি না জানলেও গণমাধ্যমে রুহুলের নাম দেখে খোঁজ নেয় পরিবার। পরে পরিবার নিশ্চিত হয় রুহুল আমীন মারা গেছেন। এরপর থেকে তার পরিবারের কান্না থামছেই না।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে রুহুল আমিনের বাড়িতে দিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠান ভর্তি মানুষ। চলছে স্বজনদের আহাজারি। মা রাবেয়া বেগম আর বোন রুনা আক্তার, বড় ভাই রফিক মাতুব্বর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। পাশে সাত বছর বয়সী ছেলে তাসরিফ ও ৪ বছর বয়সী মেয়ে তাসপিয়া নিরব চোখে তাকিয়ে আছে। প্রতিবেশীরা অনেকেই ছুটে এসেছেন রুহুলের পরিবারকে সান্তনা দিতে।

রুহুল আমিনের মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাপজান অনেক ভালো ছিলো। কখনো নিজের কষ্টর কথা আমাগো কইতো না। আমাগো ৫টা মানুষের ভরসা ছিলো। আইজ আল্লা আমার বাজানরে কই রাখছে জানি না। তোমরা আমার রুহুলের খোঁজ আইন্না দাও। ওরে আমি দেখতে চাই। আর মারা গেলে লাশটা আমাকে দেখাও।’

উঠোনের এক কোনো দুই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন রুহুল আমিনের স্ত্রী আসমা বেগম। স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার স্বামী কাজ থেকে ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। আমরা জানি না উনার লাশ কোথায় আছেন। দুইটা ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, শাশুড়ী, ননদ লইয়া কই যামু আমি। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমার স্বামীর লাশ যেনো দ্রুত খুঁজে বের করা হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন বলেন, আমরা ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি রুহুল মারা গেছেন। তারপরেও আমরা প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করছি তার খোঁজ নিতে। মারা গেলে অবশ্যই মৃতদেহ দেশে আনার বিষয় আমরা চেষ্টা করবো। আর অসহায় পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

রুহুলের পরিবারে স্ত্রী, দুই সন্তান ও মা রয়েছে। মৃত্যুর সংবাদের পর থেকে তাদের আহাজারীতে ভারি হয়ে উঠছে পুরো এলাকা। তাদের একটি দাবি, দেশের মাটিতে যেন রুহুলের মৃতদেহটি আনা হয়। সেই সাথে অসহায় পরিবারটিকে যেন সরকারীভাবে সহযোগিতা করা হয়। ভয়াবহ এই দুঘর্টনায় ৪৭ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের ৩৪ জন বাংলাদেশি ছিলেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের মারা যায় ১৮ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/এসএ)