কারাগারে কেমন আছেন মিন্নি?

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৮:২১ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩, ২২:২০

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। কারাগারে তিনি ভালো নেই বলে দাবি করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। 

মিন্নির বাবা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কারাগারে আমার মেয়ে (মিন্নি) বেঁচে আছে, এটাই আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। তার শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বেঁধেছে। এছাড়াও কারা কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সঙ্গে ভালো আচারণ করছেন না বলে একটি বিশেষ সূত্রে আমি খবর পেয়েছি। মিন্নির জামিন চেয়ে আবেদন করা হলেও এখনও সেই আবেদনের শুনানি হয়নি।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, কারাগারে মিন্নি ভালো আছেন।
  
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘদিন পুলিশ নজদারিতে রাখে মিন্নিকে। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই বরগুনা পুলিশ লাইনসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর পর মাঝে জামিনেও ছিলেন তিনি। পরে সেই জামিন বাতিল করা হয়। সেসময়ে বরগুনা জেলা কারাগারে ছিলেন মিন্নি। এরপর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারাগারের কনডেম সেলে সুস্থ আছেন মিন্নি।  তিনি প্রতি সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।

কারাগারে মিন্নি কেমন আছেন জানতে চাইলে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কারাগারে আমার মেয়ে (মিন্নি) বেঁচে আছে, এটাই আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। তার শরীরের নানা ধরনের রোগ বাসা বেঁধেছে। এছাড়াও কারাগারে দেওয়া খাবার সে খেতে পারে না। প্রিজন ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খেতে গেলেও অনেক টাকা লাগে। ওখানে একটি ডিমের দাম ৮০ টাকা, এক টুকরো পোল্ট্রি মুরগির মাংশের দাম দেড়শ টাকা, একটি ডাবের দাম দেড়শ টাকা। কারাগারে যার টাকা আছে সেই ভালো থাকতে পারে।’
 
তিনি বলেন, ‘কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া একজনের কাছ থেকে আমি শুনেছি কারাগারে আমার মেয়েকে দিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করানো হয়। এছাড়াও তাকে দিয়ে নানা ধরনের কাজ করানো হয়। যদি অন্য কেউ অপরাধ করে তবে সেই অভিযোগ আমার মেয়ের উপরে চাপিয়ে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। অল্প বয়স্ক মানুষ দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলে তার মানসিক অবস্থা কেমন হয়? আমি ঢাকায় এসে সংবাদ সম্মেলনে করে বিস্তারিত জানাব।’

মোজাম্মেল হোসেন জানান, তার মেয়ের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করলেও এখনও শুনানি হয়নি। 

মিন্নির বাবার অভিযোগ অস্বীকার করে কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কারাগারে মিন্নি ভালো আছেন। তিনি একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাকে দিয়ে কোনো কাজ করানোর সুযোগ নেই। আর কারাগারের প্রিজন ক্যান্টিনে একটি ডিমের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। একশ্রেণির দুষ্টুলোক কারাগারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।’
 
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা শহরের সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে। এ মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। পরবর্তীতে তিনিই হয়ে যান অন্যতম আসামি। কারণ তার পরিকল্পনাতেই প্রেমিক নয়ন বন্ড হত্যা করেছিলেন রিফাতকে। পরে ওই বছরের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নয়ন বন্ড। 

রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে করা মামলায় ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আদালতের রায়ের পর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে নেওয়া হয় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে। সেখানে কনডেম সেলে অবস্থান করছেন তিনি। নিম্ন আদালতের দেওয়া মিন্নির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে তার পরিবার। তবে এখনও  আপিলের শুনানি হয়নি। 

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে মিন্নি ছাড়াও অন্য যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও মো. হাসান। খালাস পেয়েছেন মো. মুসা, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/এআরএ/এফএ)