বাহারি ইফতারে জমজমাট পুরান ঢাকার চকবাজার

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭:০৮

লিটন মাহমুদ, ঢাকাটাইমস

মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ ইফতারি। রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার টং দোকান পর্যন্ত সর্বত্র রকমারি ইফতারসামগ্রীর পসরা দেখা যায় এই মাসে।

যুগ যুগ ধরে ইফতারির জন্য বেশ জনপ্রিয় পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতার বাজার। চকবাজার মানেই বাহারি ইফতারের আয়োজন। প্রতিবারের মতো এবারও এই ইফতার বাজারে দেখা গেছে বাহারি ইফতার।

রমজানের দ্বিতীয় শুক্রবার (৩১ মার্চ) জুমার নামাজের পর সরেজমিনে চকবাজার ইফতার বাজার ঘুরে দেখা যায়, বড় বাপের পোলায় খায়, জালি কাবাব, সুতা কাবাবসহ নানা চমকপ্রদ ও স্বাদের ইফতারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এছাড়া কোনো কোনো দোকানিরা ক্রেতাদের সামনেই তৈরি করছেন নানা পদের কাবাব, চিকেন ফ্রাই, চিকেন স্টিক, বিভিন্ন কাটলেট, শাহি জিলাপি, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, শাহি পরোটা, কিমা পরোটা, ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, ফালুদা, দইবড়া, বেগুনি, আলুর চপ। আর এসব কিনতে এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভোজনরসিক রোজাদারেরা।

তবে এবার ইফতার পণ্য ও সামগ্রীর দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। কিন্তু বিক্রেতাদের দাবি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিরূপায় হয়েই এবার প্রায় সব ইফতার পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে।

সরেজমিনে এদিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা ইফতারসামগ্রী কিনতে চকবাজারে ভিড় করেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সমাগমও বাড়ে। ফুটপাত, রেস্টুরেন্ট, পাড়া-মহল্লার গলিপথেও ইফতারির ছোট-বড় দোকান বসে। কোথাও কোথাও রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে ইফতারির দোকান। বাঁশ আর টেবিল বসিয়ে পুরো ফুটপাত দখলে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বত্রই ক্রেতাদের আকর্ষণে চলছে বাহারি রং আর স্বাদের ইফতারি আইটেম তৈরির প্রতিযোগিতা। দুপুর থেকে ইফতারির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ইফতারির নগরীতে পরিণত হয় চকবাজার।

এদিন ইফতারি কিনতে আসা লোকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, এখানে ইফতার কিনতে আসা অধিকাংশ মানুষের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে এই ইফতারি বাজারের ৭৮ বছরের পুরাতন ইফতার আইটেম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই পদটি। এই আইটেম বিক্রেতারা ঢাকাটাইমসলে জানান, কেবল পুরান ঢাকার পুরনো কারিগররাই এই পদটিকে ঐতিহ্যের স্বাদে তৈরি করতে সক্ষম। তাই এর জনপ্রিয়তা খুব। আর এজন্যই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাবারটির চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে।

দোকানিরা জানায়, গত বছর ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এ বছর তা ২০০ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে বিক্রি হচ্ছে এই বিশেষ খাবার।' তাদের দাবি, ১২ পদ দিয়ে তৈরি হয় এই বিশেষ আইটেমটি।

এর বাইরে এই বাজারে থাকা অধিকাংশ খাদ্যের দামই এবার বেড়েছে। গেলো বছর যে চিকেন ফ্রাইয়ের দাম ছিল ৮০ টাকা, এবার সেই আইটেম বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ টাকা। ১৮০ টাকার চিকেন স্টিক এবার ২৪০ টাকা। শাহি জিলাপি গত বছর ছিল ৩০০ টাকা কেজি। এ বছর সেটাই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়।

আর শাহী পরোটার দাম ৬০ থেকে ১২০ টাকা, গরুর সুতি কাবাব কেজি প্রতি ১৪০০ টাকা, খাসির সুতি কাবাব ১৬০০ টাকা, ছোলা-ঘুঘনি ৩০০ টাকা কেজি, ফালুদা এক লিটার ২০০ টাকা, দইবড়া পিস ২০ টাকা, সাধারণ জিলাপি ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিন পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো আবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'বাসায় আমাদের ইফতারি বানানো হয়। তারপরও আমরা বাইরে থেকে ইফতার নেই কারণ এটা আমাদের একটি রেওয়াজ।' 

পুরান ঢাকার আরেক বাসিন্দা ইকলাস আলী বলেন, ‘বাসায় ইফতার বানানো হলেও বাইরে থেকে ইফতার না নিলে, মনে হয় কিছু একটা অসম্পূর্ণ থেকে গেল। তবে এ বছর ইফতারের দাম বেশি থাকায় একটু কম কম কিনছি।’

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/এলএম/কেএম)