আলফাডাঙ্গায় অভিনব পদ্ধতিতে স্বর্ণ প্রতারণা: অভিযুক্ত চারজন গ্রেপ্তার, অলঙ্কার উদ্ধার

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:২৯ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অভিনব পদ্ধতিতে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বাজারে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে ঠকিয়ে স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মো. সৈয়ব আলী, তার স্ত্রী মোছা. নাজমিন বেগম, তৈয়ব আলী এবং তামিম রহমান সজিব।

 

চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান।

 

পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৬ মার্চ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বাজারে ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের দোকানে দুইজন মহিলা প্রবেশ করে জানান, তারা কিছু স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি করবেন। এসময় তাদের কাছে থাকা ২ ভরি ১৫ আনা ওজনের দুইটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল, এক জোড়া কানের রিং দেখান। দোকানি স্বর্ণ যাচাই-বাছাই করে দেখতে পান সেগুলো ঠিক আছে বা আসল স্বর্ণ। তখন ওই দুই মহিলা জানান, তারা এর পরিবর্তে টাকা নিবেন না, নতুন স্বর্ণের অলঙ্কার নিবেন।

ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকার তাতে রাজি হন। এসময় ওই দুই নারী বলেন, তারা পাশের দোকান থেকে পুরাতন সোনার বাজার মূল্য যাচাই করে আসতেছেন। কিছুক্ষণ পর তারা দোকানি প্রবেশ করে পুরাতন অলঙ্কার দিয়ে দোকান থেকে নতুন অলঙ্কার নেন এবং বলেন- পছন্দ না হলে পরবর্তীতে মডেল পরিবর্তন করবেন। দোকানি সরল বিশ্বাসে পুরাতন অলঙ্কার নিয়ে নিলে ওই দুই মহিলা দোকান ত্যাগ করেন।

এসময় ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের সন্দেহ হলে তিনি পুরাতন অলঙ্কারগুলো পরীক্ষা করে দেখেন এগুলো ইমিটিশন (নকল স্বর্ণ)। পরে তিনি থানায় মামলা করেন।

 

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, মামলার পর পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে অভিযান চালায়। এসময় চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা একই পরিবারের সদস্য। চক্রের মূলহোতা সৈয়ব আলী ও তার স্ত্রী নাজমিন বেগম। আর সৈয়দ আলীর ভাই তৈয়ব আলী ও তার ছেলে তামিম রহমান সজিব চক্রে জড়িত।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, এক বছর আগে সৈয়ব আলী স্বর্ণ প্রতারণা সম্পর্কে হাতে কলমে কৌশল রপ্ত করে। আর তার স্ত্রী নাজমিন বেগম স্থানীয় পীরগঞ্জের লাকমিঠাপুরের বৃদ্ধা হাসনা বেগমের কাছ থেকে প্রতারণার কৌশল শিখেছে। তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে ভাই তৈয়ব আলী, ছেলে তামিম রহমান সজিবকে প্রশিক্ষণ দেয়। চক্রটি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, নরসিংদী, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, যশোর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় জুয়েলারি দোকানে প্রতারণা করেছে।

হঠাৎ ধনসম্পদের মালিক সৈয়ব আলী

এক সময় সিনেমা হলের মাইকিং করত সৈয়ব আলী৷ পরে খাবার হোটেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করে। তখন ইমরান, কালাম, মধু খাঁ, মাজেদুল খাঁ নামে কয়েকজনের কাছ থেকে প্রতারণার কৌশল জানতে পারে। পরবর্তীতে এই পেশায় নামেন। এরপরই সৈয়ব আলী আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। এলাকায় স্থানীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদ পান৷ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এই সৈয়ব আলী স্থানীয় একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন।

 

যা উদ্ধার হয়েছে

প্রতারক চারজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে ২২ ক্যারেটের চারটি স্বর্ণের চেইন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/এসএস/কেএম)