কলেজছাত্র কিবির হত্যার ১২ বছর: ‘মরার আগে যেন বিচার দেইখে মরতি পারি’
প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০৮ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:২৩
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হেলেঞ্চা দক্ষিণপাড়া এলাকার মো. ছলেমান শেখের মেজ ছেলে কিবির শেখকে (২০) ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর রাতের আধারে গলাকটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যার পর ১৫ নভেম্বর তার বাবা ছলেমান শেখ বাদী হয়ে মামলা করেন।
ওই মামলায় উপজেলার দক্ষিণ শিয়ালদী গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে নিলু মিয়ার ছেলে শফিক মোল্যা (২০), বুড়াইচ এলাকার আকবার মিয়ার দুই ছেলে সুমন শেখ (২৫) ও সাদ্দাম শেখকে আসামি করা হয়। এরপর প্রায় এক যুগ কেটে গেলেও সন্তান হত্যার বিচার না পেয়ে হতাশ কিবিরের পরিবার। মৃত্যুর আগে সন্তানের খুনিদের বিচার দেখে যেতে চান তারা।
সম্প্রতি নিহত কিবির শেখের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ছেলে কিবির হত্যার বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন তার মা-বাবা। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে গেছে তাদের চোখের জল। হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে এমনটা দেখে মরতে চান তারা। কিবিরের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আজকে ১২ডা বছর হয়ে গেল আমার ছাওয়ালডা নাই। ওরা আমার ছাওয়ালডারে মাইরে ফেলাইছে। যারা আমার ছাওয়ালডারে মাইরা ফালাইছে, তাগোর বিচার চাই। মরার আগে যেন বিচার দেইখে মরতি পারি।’
ছেলের শৈশবের দূরন্তপনা, ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা কিবিরের স্মৃতিগুলো হাতরে বেড়ায় বাবার মনকে। ছেলে হত্যার এতগুলো বছর কেটে গেলেও ছেলে হত্যার বিচার পাবেন এমন একবুক আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কিবরিয়ার বাবা ছলেমান শেখ। ভাবছেন কবে পাবেন ছেলে হত্যার বিচার?
আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কিবির পড়াশোনার পাশাপাশি ভাড়ায় মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করতেন। স্বপ্ন ছিল এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করবেন। বাবা-মায়ের দুঃখ দূর করবেন; কিন্তু তা আর হতে দেয়নি ঘাতকরা। রাতের আঁধারে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে উপজেলার বুড়াইচ এলাকার বারাশিয়া নদীর পাড়ে রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে গলার মধ্যস্থানে গলাকেটে হত্যা নিশ্চিত করেছিল দুর্বৃত্তরা।
খুনের রাতে কিবির তার মায়ের নিকট থেকে শীতের পোশাক নিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হলেও জীবিত অবস্থায় আর বাড়ি ফিরতে পারেনি। পরদিন সকালে কিবির শেখের গলাকাটা মরদেহ বারাশিয়া নদীতে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তার পরিবারকে সংবাদ দেয়। সেদিন লাশ দেখে বেহুঁশ হয়েছিলেন বাবা ছলেমান শেখ। জ্ঞান হারান কিবিরের মা। তৎকালে তার ছোট দুই ভাইয়ের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছিল হেলেঞ্চা গ্রামের আকাশ-বাতাস। গলাকাটা লাশ দেখতে ভিড় জমিয়েছিল হাজারো লোক। স্থানীয় প্রশাসন, ওয়ার্ড মেম্বার ও তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছিলেন ন্যায্য বিচার পাওয়ার। কিবিরের গ্রামবাসী ও কলেজের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করে চেয়েছিলেন হত্যার বিচার। সময়ের ব্যবধানে ফিকে হয়ে গেছে সবই। ছেলে হত্যার বিচারের আশায় তাকিয়ে আছে আদালতের দিকে।
কিবিরের বাবার দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী শান্তশিষ্ট ছেলে কিবির গ্রামের কারও সাথেই বাকবিতণ্ডায় জড়াতে দেখেননি কখনো। পারিবারিক কিংবা সম্পত্তিগত শত্রুতাও ছিল না কারো সাথে। তবে বাবার মনে সন্দেহের বাসা বুনছে একটি অযাচিত ঘটনা। তা হলো, অভাবের সংসারে স্বচ্ছতা ফেরাতে কিস্তির মাধ্যমে ছেলেকে ভাড়ায় যাত্রী বহনের জন্য একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করে দেন। আর ঘাতকরা এই মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই কিবিরকে হত্যা করে।
মামলাটির আইনজীবীরা জানান, মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত তিন আসামির মধ্যে বর্তমানে একজন কারাগারে ও দুজন জামিনে।
(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/এলএ)