নব্য আওয়ামী লীগারে ফুলে-ফেঁপে উঠছে ভোলা-৩ আসন: আবু নোমান
প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:১৮ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ২০:২৬
ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা কোনঠাসা হয়ে থাকায় নব্য আওয়ামী লীগারই ফুলে-ফেঁপে উঠছে। এটি তৃণমুল আওয়ামী লীগের জন্য অশুভ সংকেত।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের যে সকল ক্যাডার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে তারা এখন দলে অনুপ্রবেশ করে একই কায়দায় আওয়ামী লীগের ত্যাগীদের নির্যাতন করে যাচ্ছে।
ঢাকা টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি বিবিএস গ্রুপ ও নাহী গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে আবু নোমান হাওলাদার ভোলা-৩ আসনে নির্বাচনী হালচাল এবং তৃণমুল আওয়ামী লীগসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। আবু নোমান হাওলাদার এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে লালমোহন-তজুমদ্দিন চষে বেড়াচ্ছেন।
আবু নোমান হাওলাদার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত করছেন গণসংযোগ। বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাকে নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় আলোচনাও আছে।
ঢাকা টাইমস: বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে কি ধরনের ভূমিকা পালন করছেন?
আবু নোমান: আমি ছাত্রলীগ করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দেশের প্রতিটা মানুষকে কর্মমুখি করে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে। আমি সেই আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের যুব সমাজের জন্য কর্মসৃষ্টি করতে পারলে বেকারত্ব দূর হবে। বেকারত্ব দূরীকরণ করতে পারলে বাংলাদেশ সকল দিক দিয়ে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে মানুষকে কর্মমুখী করতে পারলে সমাজ থেকে অনেক অপরাধ কমে যাবে। তাই আমি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই। আর তাতেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেশ গড়ে তুলতে স্বক্ষম হবো।
ঢাকা টাইমস: ভোলা-৩ আসনে কেন মানুষ পরিবর্তন চায় এবং এই আসনে কেন আপনাকেই মনোনয়ন দেবে বলে মনে করেন?
আবু নোমান: নব্য আওয়ামী লীগাররা ভোলা-৩ ফুলে-ফেঁপে উঠছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের যে সকল ক্যাডার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে। তারা এখন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। প্রতিনিয়ত তাদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
ভোলা-৩ আসনের মানুষ পরিবর্তন চায় এটা আমি দ্রুত বুঝতে পারছি। কারণ, আমি যখন এই আসনে নির্বাচন করবো বলে মানুষকে জানিয়েছি তখন সকল মানুষ ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমাকে উৎসাহ দিয়েছে এবং সর্থন দিয়েছে।
ভোলা-৩ আসনের মানুষ পরিবর্তন চাওয়ার কারণ বর্তমান সংসদ সদস্যের কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুবই নাখোশ। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের সরকারের আমলের চেয়েও বেশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এই এমপির আমলে।
বিএনপি-জামায়াত ও হাইব্রিডরা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদগুলো দখল করে সহজে তারা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীর ওপর পূর্বের আক্রোশের জের ধরে নির্যাতন করছে। যা খুবই দুঃখজনক। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলে দলকে এগিয়ে নিতে পারতো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত হাইব্রিড দলে অনুপ্রবেশ করার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তৃণমুলে সকল কমিটিতে আওয়ামী লীগের নেতারা বঞ্চিত।
এমনকি এলাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজসহ থেকে সকল কমিটিতে বর্তমান এমপি লোক বিএনপি-জামায়াত জড়িত। এছাড়া ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়নি সেখানেও হাইব্রিড বা কম জনপ্রিয় নেতাদের রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের জনপ্রতিবিধিও হাইব্রিড। এই কারণে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাই মানুষ ভোলা তিন আসনে পরিবর্তন চায় এবং তারা আমাকে সেখানে নির্বাচন করতে বলে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ক্লিন ইমেজের নেতাদের তিনি নেতৃত্বে দেখতে চান। আমি ক্লিন ইমেজের লোক কি না জানি না কিন্তু বর্তমানে যে ভোলা-৩ আসনের এমপির ইমেজ কেমন তা সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে। এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বর্তমান এমপির তুলনায় অনেক ক্লিন ইমেজের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমি যেহেতু একজন প্রকৌশলী সেখানে আমার ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি। সবকিছু কিছু বিবেচনা করে আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন।
ঢাকা টাইমস: আ.লীগের মনোনয়ন পাওয়া ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
আবু নোমান: যেকোনো জিনিস অর্জন করতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। আর যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সাহস আমার আছে। ভোলা-৩ আসনে প্রকৃত আওয়ামী লীগ যারা, তারা এখন নির্যাতিত। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা অবহেলায় আছে। আর হাইব্রিডদের কারণে তারা এখন মুখ খুলতেও ভয় পায়।
হাইব্রিড আওয়ামী লীগের দখলে ভোলা। এছাড়া একই পরিবারের অর্ধশত সদস্য ভোলা আওয়ামী লীগ দখল করে আছে। এদের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে উদ্ধার করাই আমার জন্য চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি। এসব নব্য ও হাইব্রিড আওয়ামী লীগই ভোলার রাজনীতি ধ্বংসে করছে।
আমার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু নয়, এরা ভোলাবাসীর জন্য ভয়ংকর। তবে আমার সঙ্গে ভোলার-৩ আসনের জনগণ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী আছেন। তাদেরকে নিয়ে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো। ভোলা আওয়ামী লীগকে বিএনপি-জামায়াতের হাইব্রিড মুক্ত করাই চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা টাইমস: আপনি এলাকার মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য কি কি কাজ করেছেন?
আবু নোমান: আমি এমপি হওয়ার জন্য কাজ করি না। ছাত্রলীগ থাকা অবস্থায় এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কাজ করবো। সেটাই করে যাচ্ছি। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিমার্ণ, রাস্তাঘাট নিমার্ণ এবং আর্থিক অনুদান প্রদানসহ গরিব ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যার্তদের ত্রাণ, বেকারত্ব দূরীকরণে সেলাই মেশিন বিতরণ। এছাড়া দরিদ্রদের মধ্যে টিউবওয়েল ও টিন বিতরণ, ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি এবং এলাকার অসংখ্যা লোকজনকে চাকরির ব্যবস্থা করেছি।
ঢাকা টাইমস: এমপি নির্বাচিত হলে ভোলা-৩ আসনকে কিভাবে গড়ে তুলতে চান?
আবু নোমান: সংসদ সদস্য হলেই এলাকায় কাজ করবো আর না হয় করবো না—এই নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। লালমোহন-তজুমদ্দিনসহ ভোলার বিভিন্ন এলাকায় নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। লালমোহন-তজুমদ্দিনকে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
এই দুই উপজেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি ও খেলাধুলার উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও উদ্যোক্তা তৈরি, নদীভাঙন রোধ, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তারে আমার গুরুত্ব বেশি থাকবে। এছাড়া লালমোহন-তজুমদ্দিনে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে অগ্রধিকার দিয়ে কাজ করবো।
ঢাকা টাইমস: উদ্যোক্তা হিসেবে তরুণ প্রজন্মের জন্য আপনার কি বার্তা থাকবে?
আবু নোমান: মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম যেন একাত্মতা প্রকাশ করে। দেশের তরুণ প্রজন্মকে কর্মমুখি করতে হলে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকতে হবে। তরুণ প্রজন্ম দিয়ে সব সম্ভব। দেশ ও নিজেকে ভালোবাসতে হবে। মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ উগ্রবাদ থেকে দূরে থেকে বঙ্গবন্ধু আর্দশ ধারণ করে দেশ গড়ার ভূমিকায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/ডিএম)