আমার শৈশবের নদীটার সাথে কথা হলো কাল

সুজয় সরকার
 | প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪৫

"দেখ বাবা, বাঁচব আর ক'টা দিন!

অনেকদিন তো আসিস না এদিকে!

মরে গেলাম কি না খোঁজ নিস।

অনেক শুকিয়ে গেছি রে,

চলতেও পারিনে মাঝে মাঝে।

নালায় ভর দিয়ে হাঁটি। খোঁজ রাখিস!"

অথচ শৈশবে একবেলা তার বুকে না গেলে,

অনেকক্ষণ তার আদরের কাদা না মাখলে,

আমি কখনোই আমি হতাম না।

"দেখো, আমি যখন অনেক বড় হব,

তোমায় গড়িয়ে দেব গজমতির হার,

পায়ে পড়িয়ে দেব রুপোর চন্দ্রচূড়।"

একদিন তার গলা জড়িয়ে সেই বলেছিলাম।

অথচ এখন তার গা জুড়ে শুধুই পুকুরপাড়,

পায়ে পড়ানো শক্ত বাঁধের আড়।

নববধূর মতো বিশাল ঘোমটা টেনে

তাকে চলতে হয় অতি সন্তর্পণে,

লোলুপ ভাসুরের দল যেন দু'ধারে

বিছিয়ে রেখেছে দখলের জঞ্জাল।

কৈশোরে যে বিশাল মাঠ ছিল আমার রুপকথা,

সাদা চিলে ঘুড়ি নিয়ে যেখানে যেতাম হারিয়ে

যেন পঙ্খীরাজে চেপে রাজপুত্রের গতিতে ;

একদিন যে মাঠকে ভালোবেসে বলেছিলাম,

"আমি জাদুর চেরাগ হাতে পেলে

করে দেব তোমাকে এত্ত বড়, এত্ত বড়... "

তারপর একদিন সত্যিই জাদুর চেরাগ পেয়েছিলাম,

এত্ত এত্ত টাকা দেওয়া চেরাগ।

আমার সেই মাঠ আজও রুপকথার মতো;

শুধু একের পর রাজপ্রাসাদের গর্বে ভীত।

তার প্রাসাদগুলোর চিলেকোঠায় চিলে ঘুড়ির মতোই

পতপত ঘোষণা দেয় বাড়িওয়ালাদের বিজয়কেতন।

সদ্য যৌবনে যে দেবদারু হেসে বলেছিল,

"তোর বিয়ের সব ফুল আমিই দেব,

দেবদারু ফুলে বাসর সাজানো না যাক,

দেবতার চরণে পুস্পাঞ্জলি তো হয় ;

তুই ই আমার দেবতা, জাগ্রত দেবতা।"

আমার বৌভাতের ভোজের রান্নার অর্ধেক কাঠ

দিতে হয়েছিল সেই দেবদারুকেই।

দেবতার জন্য এ তো সামান্য!

প্রিয় সিঁদুরে আমের গাছটা

এখন আরও প্রিয় হয়ে

ঠাঁই হয়েছে আমাদের পালঙ্কে।

সেবার ফুল কিছু কম হলো বলে,

শিশুতোষ অভিমানে গাল ফুলিয়ে

যে গাবগাছটাকে চেয়েছিলাম ফেলতে কেটে,

ক'বছর পরে কেটেছি তাকে ঠিকই ;

না কোন অভিমানে নয় বরং

কাঠমিস্ত্রী পরাণ কাকার মতে,

"গাবগাছের জুড়ি নেই দরজার চৌকাঠে।"

যে ঘাসফড়িঙ গুলোকে বিকেলের আলোয় একদিন বিমান চড়ানোর কথা দিয়েছিলাম;

বিমান বানানোর খেয়ালিতে তাদেরই একদিন

এক এক করে পাখা ছেটে উড়িয়েছিলাম।

যে জোনাকিরা আমায় মরিচ বাতির ব্যথা ভোলাতো,

অথচ কী আশ্চর্য!

মরিচ চাষে লাভ বাড়াতে ওদের মেরেছিলাম

মাত্র কয়েকফোঁটা কীটনাশক ছিটিয়ে।

পাহাড় না দেখার ব্যথা ভোলানে টীলা টি

আমি স্বযত্নে ইটভাটা বানিয়েছি।

কচি তিলক্ষেত মাড়িয়ে গড়েছি তিলোত্তমা নগর।

পোর্সেলিনের মসৃণ মেঝেতে ঢাকা

রাসিয়ান সিরামিকের বাথটাবের জায়গাতে,

ছোটবেলায় দেখেছি ছিল এঁদো ডোবা।

বুনো বাঁশঝাড়ের জায়গায় দখল নিয়েছে

'নিউ ক্যাসেল কফি শপ'।

বেতঝোপের পাশে মাচাঙের জায়গায়

আমার দখিনের বেলকনি আজ,

বেতের আরাম চেয়ারে বসি,

মটকা চা বা কফি আসে

আরাম আসে না শুধু আর।

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :