অভিভাবকদের মৃত দেখিয়ে এতিমখানার নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশ | ০৩ মে ২০২৩, ১৫:৪১

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্রদের মা-বাবা জীবিত থাকলেও তাদের কাগজে কলমে মৃত দেখিয়ে ভুয়া সনদ তৈরি করে ওই ছাত্রদের এতিম বানিয়ে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের বিরুদ্ধে।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের রহমতপুর (রামভদ্রপুর) দারুস সুন্নাহ এবতেদায়ী কওমী হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার বিরুদ্ধে সম্প্রতি এমন অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,  মাদরাসার ২৫ জন ছাত্রের অভিভাবক জীবিত থাকলেও তাদের ভুয়া মৃত্যু সনদ  তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে দাখিল করে এতিমদের জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার মুহাতিম ও পরিচালক মওলানা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে। এর আগেও ওই মাদ্রাসা পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঁচবিবি উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে ওই ২৫ জন ছাত্রসহ মোট ৪৫ জন এতিম ছাত্রের তালিকাটি ভাতা প্রাপ্তির জন্য মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউনুছ আলী মন্ডল এবং মুহাতিম আব্দুল খালেকের যৌথ স্বাক্ষরে জমা দিলে ওই এতিমেরা সরকারি ভাতা প্রাপ্ত হয়। যেখানে প্রতিজন এতিম ছাত্র মাসে ২ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকেন।

রামভদ্রপুর গ্রামের দুলাল হোসেনের স্ত্রী বিলকিছ বেগম বলেন, আমার ছেলে কোরাইশিন ওই মাদরাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। সে প্রায়ই বাড়িতে এসে বলে, মাদরাসার হুজুরেরা আমাকে এতিম বলে থাকে। যদিও শিশুটির বাবা জীবিত আছেন। তিনি   হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজের কর্মচারী।

একই শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহমিদ সোয়াইব সিয়ামের বাবা ভূঁইডোবা গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ২০১৮ সালে মাদরাসার মুহতামিম তাকে মৃত দেখিয়ে তার ছেলেকে এতিম বানিয়ে সরকারি টাকা উত্তোলন করে থাকে। তিনি এ ঘটনার বিচারও দাবি করেছেন।

রামভদ্রপুর গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল রাফি। সে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা বলেন, আমরা দ্বীনি শিক্ষার জন্য এই মাদরাসায় দিয়েছি। প্রতি মাসে ছেলের পড়াশোনা বাবদ ৩০০ টাকা করে মুহতামিমকে দিয়ে থাকি। যখন জানতে পারলাম ২০১৪ সালে আমি মারা গেছি, তখন এই হুজুরের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মেছে।

বাগজানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসাও ও এতিমখানার সভাপতি ইউনুছ আলী মন্ডল বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জমাদানকৃত তালিকায় দেখানো স্বাক্ষরটি আমার না। ছাত্রদের অভিভাবকের মৃত্যু সনদ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

মুহাতিম আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের জানান, এসব ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে তিনি সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে গোপনে আপস-রফার প্রস্তাবে তিনি অকপটে জাল সনদ তৈরি করার কথা স্বীকার করেন এবং এতিম বাচ্ছাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এ কাজটি করেছেন। এ বিষয়ে সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ জানান।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোছা. শাহিনুর আফরোজ জানান, এ ঘটনা জানার পর মাদরাসার দুইজন ছাত্রের স্বীকারোক্তিতে সত্যতা পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য স্থানীয় বাগজানা ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগজানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সিল ও স্বাক্ষর জাতিয়াতি করেছেন মুহতামিম। তিনি জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে মৃত্যু সনদে একই নম্বর ব্যবহার করে সমাজ সেবা থেকে অর্থ গ্রহণ করছেন। আমি এলাকার ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশকে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন পেলে সমাজসেবা অফিসে পাঠিয়ে দিব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বরমান হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হয়ে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

 

(ঢাকাটাইমস/০৩মে/এআর)