মাদারীপুরের রাজৈরে আ.লীগ নেতার ওপর হামলাকারীরা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত?
প্রকাশ | ০৩ মে ২০২৩, ১৯:৪৮ | আপডেট: ০৩ মে ২০২৩, ২০:৫৯
মাদারীপুরের রাজৈরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে (৫০) পিটিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতাকর্মী বলে মন্তব্য করেছে জেলা ছাত্রলীগ। তাদের দাবি, যারা খন্দকার আব্দুস সালামের ওপর হামলা করেছেন তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়, তারা সন্ত্রাসী। তবে অভিযুক্তরা বলছেন, তারা বহিষ্কৃত নয়, ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মী।
মাদারীপুরে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ কেন্দ্রীয় কমিটির অনুকূলে থাকলেও অন্য পক্ষটি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়া। সদর ও রাজৈর উপজেলায় ছাত্রলীগের দুটি কমিটি রয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের অনুমোদিত রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সবুজ আকন। পাল্টা কমিটির সভাপতি হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর হক।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজৈর উপজেলা পরিষদের ভেতরে আওমালী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম পিটিয়ে আহত করে পুকুরে ফেলে দেন উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সভাপতি হাসিবুল হাসান ও তার নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পর পুরো উপজেলায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাওলাদার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে অবাঞ্চিত মন্তব্য ও দলীয় কর্মকাণ্ড বিরোধী আচরণ করায় আরও আগেই হাসিবুল হাসানকে জেলা কমিটির সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পিয়াল ছাড়াও তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে আমরা বহিষ্কার করেছি। যারা আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা করেছেন তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়, পিয়াল বর্তমানে বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা। তার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। তার ভাইও ছাত্রলীগের কেউ নয়। যদি তারা ছাত্রলীগের পরিচয় দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। রাজৈর উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সবুজ।’
বায়েজিদ হাওলাদার আরও বলেন, ‘সালাম রাজৈর উপজেলার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা। তার সঙ্গে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। এ বিষয় জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে ছাত্রলীগ তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করবে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান অনিক বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে না থেকেও যারা নামের আগে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অন্যায় অপকর্ম করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সভাপতি হাসিবুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা ছাত্রলীগ আমাকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার রাখেন না। একমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি বহিষ্কার করতে পারেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমাকে নিয়ে এ ধরনের কথা বলে যাচ্ছে। তারা আমার নেতৃত্বকে ভয় পান, প্রতিহিংসার জন্য আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে দাবি করছেন।’
এদিকে খন্দকার আব্দুস সালামকে পেটানো ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর উপজেলার কালিবাড়ি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগ ও খন্দকার আব্দুস সালামের অনুসারিরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে খন্দকার আব্দুস সালামকে পেটানো ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর উপজেলার কালিবাড়ি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগ ও খন্দকার আব্দুস সালামের অনুসারীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান পলবী ও তার ছেলেদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
মহাসড়ক অবরোধের ফলে মহাসড়কের প্রায় এক ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সম্পর্কে রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, হামলার ঘটনায় এখনো থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলেই মামলা নেওয়া হবে। অভিযোগ না দিয়েই বিক্ষুব্ধরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।
(ঢাকাটাইমস/৩মে/এআর)