প্রসঙ্গ ডিএনসিসির ‘হিট’ অফিসার: পুরুষতন্ত্রের সংস্কৃতিতে নারীকে পণ্য করে দেখার অভিপ্রায়

প্রকাশ | ০৫ মে ২০২৩, ১৪:২২ | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩, ১৫:৫৯

ড. রাশেদা রওনক খান

ডিএনসিসিতে 'চিফ হিট অফিসার' নিয়োগ পেলেন উত্তরের মেয়র কন্যা, আর তাতেই শুরু হল হৈচৈ। বিষয়টি সঠিক হলো না ভুল হলো, তা সময় বলে দেবে। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা| 
আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়কালে কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ প্রশাসনে এডভাইজার হিসেবে নিয়োগ পেলেন, তা আমেরিকার রাজনীতিতে যাদের আগ্রহ আছে, জানবেন নিশ্চয়ই। বিশেষজ্ঞরা তখন বলেছিলেন, এটি ট্রাম্প প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, এবং তা প্রচন্ডভাবে করেছিলও। রাজনৈতিক ফিল্ডে প্রেসিডেন্ট কন্যা ইভাঙ্কার এই নিয়োগ নিয়ে 'ইথিক্স' এর প্রশ্ন উঠলেও সোশ্যাল মিডিয়া এই আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজনই মনে করেনি, বরং শুরু করলো মেয়েটির চরিত্র হনন, কিভাবে কতভাবে  ট্রল করা যায়, তার কলেজ জীবনের ছোট জামা কাপড়ের ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল! এখানে জামার সাথে এই পদের সম্পর্ক কোথায়, কে জানে! প্রাশাসনিকভাবে কন্যা পাশে থাকায় তাতে ট্রাম্প এর লাভ হলো, না ক্ষতি হলো, সেই আলোচনা কোথায় কখন যেন উধাও হয়ে গেলো!   

আমাদেরও কাল সারাদিন ধরে  'হিট' শব্দটি যেভাবে 'হট' এ পরিবর্তিত হলো, তা দেখে ইভাঙ্কার কথাই বার বার মনে পড়ছিলো। ভাবছিলাম, আমেরিকা, ইংল্যান্ড কিংবা বাংলাদেশ- যেখানেই হউক,  নারী মাত্রই তাদেরকে সেক্সিস্ট এপ্রোচে ঘায়েল করতে হবে। দুজনেই মেয়ে বলে এবং বাবার প্রশাসনে যুক্ত হলো বলে (অবশ্যই এটা একটা বড় কারণ, অন্য কেউ নিয়োগ পেলে এই আলোচনা হয়তো এভাবে হতোই না!), একইভাবে ট্রলের শিকার হলো না? বুশরা ছেলে হলে নিশ্চয়ই 'হট' এর আলোচনা আসতো না, আসতো কি?  

লেখক: ড. রাশেদা রওনক খান, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইভানক্কা ট্রাম্প বাবার প্রশাসনে কতটা ভূমিকা রাখতে পারছিলো, সেই আলোচনা খুব অল্প পাওয়া গেলেও সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া যাবে তার চরিত্র হননের নানা উপকরণ, ছবি ও খবর।  ইভাঙ্কাকে নানাভাবে অর্ধনগ্ন ছবি দিয়ে, ট্রল করে সামাজিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে নিচু দেখানো হয়েছিলো, অথচ ঐ সংস্কৃতিতে বিকিনি পড়ে সমুদ্রস্নান করা স্বাভাবিক একটি চর্চা! এমনকি একটা সময় ইভাঙ্কাকে তার সৎ মা অর্থাৎ ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়ার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলো ট্রাম্পের চারিত্রিক দিককে ইঙ্গিত করে!  কি বিচ্ছিরি আমাদের পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাগুলো, ভাবা যায়? 

দুটো ঘটনাকে এক ফ্রেমে এনে যখন ভাবছিলাম, ক্লদ লেভিস্ট্রসের 'সংস্কৃতির সার্বজনীনতা'র কথা  মনে পড়ছিল, যেখানে তিনি বলছেন, সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় সার্বজনীন নিদর্শনগুলি মানুষের মনের অপরিবর্তনীয় কাঠামোর পণ্য| যেমনটা আমরা এই ঘটনায় দেখতে পাচ্ছি,  পুরুষতন্ত্রের সংস্কৃতিতে নারীকে পণ্য করে দেখার অভিপ্রায়- তা সে উন্নত, উন্নয়নশীল আর অনুন্নত সমাজ যেখানেই হউক, প্রায় একই!

(সংগত কারণেই দুজনের ছবি প্রকাশ করা থেকে বিরত রইলাম! আপনারও থাকুন প্লিজ| তারচেয়ে বরং দেখি, ডিএনসিসি আসলেই ঢাকার তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে পারে কিনা! ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রভাবে আমাদের মতো দেশগুলোতে যা গরম পড়েছে...তা হতে রেহাই পেলেই হয় কিছুটা! )

 

লেখক: ড. রাশেদা রওনক খান, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত এবং হুবহু প্রকাশিত)