নারীদের সঙ্গে ‘অশ্লীল আচরণে’ যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার, হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

প্রকাশ | ০৫ মে ২০২৩, ২০:৪৮

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস

ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক ও ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকিকে থানায় নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। তবে ওসি বলছেন, মূলত বৈশাখী মেলায় নারীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণের অভিযোগে এলাকাবাসী পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে। পরে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। তাদের ছেড়ে না দেওয়ায় তারা এমন ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করছেন বলে মন্তব্য ওসির।

 

বৃহস্পতিবার (০৪ মে) রাত ৯টায় ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে ওসির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান পুলক। বলেন, দুজনকে অন্যায়ভাবে থানায় ধরে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে এবং চোখে কাপড় বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করার হয়েছে। তার হাত ওসি ভেঙে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন পুলক। 

 

পুলক অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল রাত সোয়া ৯টার দিকে আমাকে এলাকার এক বড় ভাই ফোন কল দিয়ে বলেন যে, পাবলিক ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় পুলিশের সঙ্গে রকির ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি দেখার জন্য আমাকে যেতে বলে। তাদের কথায় এবং মেলাটি আমার বাড়ির পাশেই হওয়ায় আমি তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখি যে রকিকে পুলিশ টানাহেঁচড়া করে গাড়িতে তুলছে। আমি এলাকার বড়ভাই হিসেবে ওসির কাছে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি অযথা  উত্তেজিত হন এবং আরও পুলিশ সদস্যদের ডাকেন। পরে আমার কথা না শুনে ওসি বিনা অপরাধে আমাকে পিকআপে তুলে থানায় নিয়ে যান।’

যুবলীগের এই নেতা বলেন, ‘পরে আমাকে তুলে ওসির রুমে নিয়ে গিয়ে অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ওসি। সেগুলো আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ যা সভ্য সমাজে মানায় না। গালিগালাজের একপর্যায়ে আমার চোখে গামছা বেঁধে ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে লাঠি দিয়ে মারধর করতে থাকে। এভাবে একটি লাঠি ভেঙে ফেলার পরেও অন্য লাঠি দিয়ে ওসি ও তার সহযোগী পুলিশ কর্মকর্তারা আমাকে প্রহার করতে থাকেন। যখন আমি নিস্তেজ হয়ে যাই তখন তারা প্রহার করা বন্ধ করেন। তাদের মারধরের আমি প্রচণ্ডভাবে আহত হই এবং আমরা হাত ভেঙে যায়।’

পুলক জানান, পরে তিনি চিকিৎসার কথা বললে পুলিশ ওই দিন রাত ৩টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেও ভালোভাবে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই আবার তাকে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সকাল ৯টায় আদালতে পাঠানো হয়। সেখান থেকেও তার অবস্থা দেখে জেল কর্তৃপক্ষ নিতে চায়নি। কিন্তু ওসি কামালের তদবিরে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে নেওয়া হয়। ভাঙা হাত নিয়েই তিনি কারাগারে ছিলেন। পরে ২ মে জামিনে বের হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। এখনো তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. নাসরুল ইসলাম বলেন, ‘আসাদুজ্জামান পুলক হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের ক্যাবিনে ফিজিক্যাল এ্যাসালড রোগী হিসেবে ভর্তি আছেন। তার বাম হাতের একটি হাড় ভেঙে গেছে। এর চিকিৎসা তাকে দেওয়া হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল রাতে আমাদের কাছে ফোন আসে কতিপয় ছেলেপেলে মদপান করে এসে বৈশাখী মেলায় নারীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ  ও ধাক্কাধাক্কি  করছে। এমন খবরের প্রেক্ষিতে সেখানে পুলিশ পাঠানো হলে দুস্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়। পথিমধ্যে মেলা কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় রকি ও পুলক নামে দুজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় উপস্থিত জনতা রকি ও পুলককে মারধর করে পুলিশে তুলে দিলে তাদের থানায় নিয়ে আসা হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পর দিন তাকে আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করি।’

 

পুলককে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগটি নিত্যান্তই মিথ্যা। কারণ তারা চেয়েছিল আসামিদের ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে। আমরা যখন দেখি থানায় পুলকের নামে পাঁচটি ও রকির নামে নয়টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মানুষকে জিম্মি করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় ও পুলিশকে মারধরের একাধিক মামলা রয়েছে থানায়। যদি সেদিন আমরা তাদেরকে ছেড়ে দিতাম তাহলে তারা আমাদের নামে এই মিথ্যা অপবাদ দিত না।’

 

এদিকে জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আব্দুল মজিদ আপেল জানান, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচারের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে পুলিশ সুপার ও রংপুরের ডিআইজি জানানো হয়েছে।

 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের অনুসন্ধানে রয়েছে। অনুসন্ধান রিপোর্টের পরে আমরা এ ষিষয়ে পদক্ষেপ নেবো।’

(ঢাকাটাইমস/০৫মে/কেএম)