স্থানটা বড্ড নড়বড়ে আজ

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২৩, ০৯:০৫ | আপডেট: ১৩ মে ২০২৩, ০৯:৪১

রেজাউল মাসুদ

গুরুজনে করো নতি’ বা বড়দের সবসময় শ্রদ্ধা করবে–এই উপদেশ বাক্যটি শৈশব থেকে শুনেই আমরা বড় হয়েছি। বয়সে যারা বড় তাদের সম্মান করেছি। তাদের মুখোমুখি হতে ভয় পেয়েছি। কদাচিৎ অন্যায় বা ভুল কিছু যদি করেই থাকি তাহলে তো আর কথাই নেই। তাদের সামনে দাঁড়াতে গিয়ে রক্তশূন্য ফ্যাকাসে মুখে মনে হত পা দুটো শিথিল হতে হতে ক্রমশ অবশ হয়ে যাচ্ছে। এরপর ভাগ্যে কখনো শাস্তি জুটতো। কখনো বা রাগত স্বরে বলতে শুনেছি,” যাও এইবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম”।

 

এতকিছুর পরেও গুরুজন, শিক্ষক বা বয়সে যারা বড়, তাদের স্নেহধন্য হতে সবসময় মন চাইতো। তাদের কীভাবে খুশি করা যায় সেই চেষ্টা থাকতো প্রতিনিয়ত। স্কুলের হেড স্যার, বড় স্যার, মৌলভী স্যার কিংবা এলাকার মুরুব্বী, হুজুর এসব নাম শুনলে ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকতাম।কেননা তারা স্কুলের কিংবা এলাকার বয়োজৈষ্ঠ সিনিয়র। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভয় দুটোই কাজ করতো। আমাদের পরিবারে দাদা- দাদী থাকতেন, তাদের ডিঙিয়ে আমরা কেউই কথা বলতাম না। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাদের অনুসরণ করতাম। সুখে দুঃখে তাদের পরামর্শ নিতাম সবাই। তাছাড়া আমাদের সমাজে সকল কাজে বয়োজ্যেষ্ঠদের অগ্রাধিকার থাকতো। তখনকার সময়ে স্কুল, সমাজ বা পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠরা ছিলেন বটবৃক্ষের ছায়ার মতো। কালের পরিক্রমায় বয়োজ্যেষ্ঠর স্থানটা যেন বড্ড নড়বড়ে হয়ে গেছে।

 

টগবগে তরুণকেও একদিন বয়সের ভারে নুয়ে যেতে হয়। এটাই নিয়ম, এটাই সত্য, এটাই সুন্দর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি মানুষের পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বয়সের ভারে নুয়ে যাওয়া মানুষটির মনকে আমরা দেখি না, তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে  দেখি তার জবুথবু শরীর! অবহেলায় দেখি শিশুসুলভ আচরণ। ঠিক তখনই তার প্রয়োজন হয় একটু মানসিক শান্তির। বৈষয়িক চাহিদা আর বস্তুগত দাবির কাছে আমরা হেরে গিয়ে আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর হতে শিখেছি। এ স্বার্থপরতা, হীনম্মন্যতায় পরিবার-পরিজনদের এমনকি বয়োজৈষ্ঠদের দূরে সরিয়ে রেখেছে।

 

একদিন যাঁদের মাধ্যমে পৃথিবীর আলোয় এসেছিলাম, যাঁদের আদর্শ অনুকরণ করতে চেয়েছি, যাঁদের সহযোগিতা ও পরামর্শে আজ এত বড় হয়েছি, তাঁদের জন্য আমাদের আগামীর দিনগুলোতে একটু সময় বেঁধে রাখি।

 

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা