ভৈরবে প্রবাসীর স্ত্রীসহ সন্তানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, স্বজনদের দাবি হত্যা

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ মে ২০২৩, ১৭:১০

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রবাসীর স্ত্রীসহ সন্তানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ শাশুড়ি ও ননদ মিলে সন্তানসহ গৃহবধুকে হত্যা করেছে। নিহতরা হলেন, উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শুম্ভুপুর পাক্কামাথার এলাকার ইতালি প্রবাসী ফরহাদ মিয়ার স্ত্রী জোনাকি আক্তার (২৮) তার ছেলে আলিফ (০৩) ।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শুম্ভুপুর পাক্কার মাথার এলাকার একটি বসত বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটেছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাত বছর আগে উপজেলার কালিকাকপ্রসাদ বাসস্টেন্ড এলাকার বচুর বাড়ির রইছ মিয়ার মেয়ে জোনাকি আক্তারের সঙ্গে শুম্ভুপুর পাক্কা মাথার এলাকার বাসিন্দা ফারুক মিয়ার ছেলে ইতালি প্রবাসী ফরহাদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এটি প্রবাসী ফরহাদের দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। কয়েক বছর সংসার করার পর তাদের পরিবারে জন্ম নেয় একমাত্র পুত্র সন্তান আলিফ। স্বামী প্রবাসে থাকায় শুম্ভুপুর শ্বশুর বাড়িতে শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও ননদের সঙ্গে বসবাস করতেন। শ্বাশুরি বেবী বেগম ও ননদ কুলসুমের সঙ্গে প্রবাসীর স্ত্রী জোনাকি আক্তারের সঙ্গে প্রায়ই নানা বিষয়ে ঝগড়া হতো। এসব নিয়ে বউ শ্বাশুরির মধ্য অমিল চলছিল। গতকাল রবিবার রাতেও শাশুড়ি ও ননদের সঙ্গে ঝগড়া হয়। সোমবার বেলা ১১টার দিকে বাসার রুমের ভিতরে প্রবাসীর স্ত্রী ও ছেলের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের মৃত্যু ঘোষণা করেন।

নিহত জোনাকি আক্তারের বড় বোন ঝর্ণা বেগম বলেন, আমার বোনকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ প্রবাসে থাকা স্বামী প্রায়ই যৌতুকের জন্য বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার করতো। অত্যাচারে কথা আমাদের কাছে বললে আমার বোনকে আমরা বলি তুই আমাদের বাড়িতে চলে আস। সে আসতে চায় না। সে সবকিছু সহ্য করে স্বামীর সংসার করতে চাই। গতকাল রোববার রাতে হঠাৎ জোনাকি ফোন করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আমাকে দেখবে বলে সকালে তার বাসায় যেতে বলে। আমার সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে মিল না থাকায় আমি তার বাসায় যায়নি। পরে আবার আজ সকাল ১০টার দিকে আমাকে কল দিয়ে বলে আপা আমার আলমারিতে কিছু টাকা আর স্বর্ণ আছে সেগুলি তুই এসে নিয়ে যা। পরে আমি আমার স্বামী ও ভাবীকে বোনের বাসায় পাঠায়। তারা গিয়ে দেখে আমার বোন ও তার ছেলে বাসার রুমে ভিতরে মধ্য গলায় দড়ি বাধা অবস্থায় ঝুলছে। এ সময় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের বাসায় থালা দিয়ে পালিয়ে যায়। আমার বোনকে যৌতুকের জন্যই শ্বাশুরি ও ননদ মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আপনাদের মাধ্যমে আমার বোন ও ভাগনে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

নিহতের খালাতো ভাই জাকির হোসেন বলেন, আমার মামাতো ভাই ফোন করে জানান জোনাকি ও তার ছেলেকে নাকি তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন মিলে গলায় ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলছে। এই ঘটনা শুনে জোনাকির শ্বশুর বাড়িতে ছুটে যায় সেখানে গিয়ে দেখি দুজনের মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। শ্বাশুড়ি ও ননদ পরিকল্পনা করেই আমার বোনকে গলায় দড়ি দিয়ে হত্যা করেছে। তাদের হত্যার বিচার দাবি করছি।

নিহত জোনাকির বোনের মেয়ে স্বর্ণা বলেন, আমি জোনাকি আন্টির সঙ্গে থাকতাম। আন্টির শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রায়ই মারত এবং চুল ধরে টানত। আজ সকালে আন্টির শ্বাশুড়ি ও ননদ কুলসুম দুজনে মিলে আন্টিকে মারেন। এসময় আমি যখন বাহিরে চলে যায় পরে বাহির থেকে এসে দেখি দুজনে মিলে আন্টির ছেলে ও তাকে গলায় দড়ি দিয়ে মেরে ফেলছে। পরে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নওরিন ফাতেমা সুরভী জানান, নিহতের স্বজনরা দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে আমরা তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাদের মৃত্যু ঘোষণা করি। তাদের দুজনের গলায় দাগ পাওয়া গেছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তাদের মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে বলে তিনি জানান।

ভৈরব থানার পুলিশ পরিদর্শক এসআই জিন্নাহ জানান, ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীসহ সন্তানের মৃত্যুর ঘটনার খবর শুনেই হাসপাতালে ছুটে যায়।

নিহতের গলায় আঘাতের দাগ পাওয়া যায়। নিহতদের সুরতাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :