শেখ হাসিনা সেদিন ফিরেছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ পেয়েছিল আলোর দিশা

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
| আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ২০:২৮ | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২৩, ১৯:৪২

দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসেন। ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশে অবস্থান করার কারণে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান দুই বোন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। শেখ হাসিনা সেদিন ফিরেছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই’।

ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকার তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। ওই দিন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর এলাকাজুড়ে লাখো জনতার ঢল নেমেছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনতার স্রোত ছুটে এসেছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেখতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হারিয়ে দিশাহারা আওয়ামী লীগ পেয়েছিল আলোর দিশা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন দিনের আগমনী বার্তা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল, ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।

দেশের মাটিতে পা রাখার আগেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫, ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।

বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বারবার সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পথচলায় বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন করে এক সময়ের মঙ্গা কবলিত, দুর্ভিক্ষ জর্জরিত বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রতীক, বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক। তিনি একজন বাঙালি নারীর সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি, যাকে দেখলে একজন বাঙালি নারী কেমন, সেটি দেখা যায়।

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে নজির স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্যাতন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের সার্বিক সহায়তাসহ মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করায় শেখ হাসিনাকে মানবতার প্রতীক হিসেবে মনে করছেন বিশ্ব নেতারা।

১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের অভ্যান্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ ২৫ বছরের সমস্যার সমধান করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনেন শান্তির কন্যা শেখ হাসিনা। এই শান্তি প্রক্রিয়ায় তার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো তাঁকে " হফোয়েট- বোজনি" শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই প্রথমবারের মতো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। তলাবিহীন ঝুড়িকে তিনি খাদ্যে পরিপূর্ণ করেন।

২০০৫ সালের জুন মাসে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির স্বপক্ষে অবদান রাখার জন্য " পিপলস ফ্রেন্ডসশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া" শেখ হাসিনাকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্বখ্যাত " ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯" এ ভূষিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি ইংল্যাণ্ডের হাউস অব কমন্সের স্পীকার জন বার্কো দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দূরদর্শি নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে তার অনবদ্ধ অবদানের জন্য " গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড" প্রদান করেন।

শেখ হাসিনার চিন্তাতে মানব কল্যাণ, পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা, নেতৃত্বে দূরদৃষ্টি,গনতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার, সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তাঁর সেই নিরলস সাধনা ও প্রচেষ্টাকে সম্মান দেখিয়ে ত্রিপুরার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি সম্মান সূচক " ডি- লিট" ডিগ্রি প্রদান করে শেখ হাসিনাকে।

২০১২ সালে ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সভায় ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে শেখ হাসিনার দেওয়া ' জনগণের ক্ষমতায়ন' এবং 'শান্তির সংস্কৃতি' প্রস্তাব পাশ হয়। কারও সাথে বিরোধ না করেও বিভিন্ন ভাবে আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করা যায় তারই বাস্তব মায়ানমার এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়, পরবর্তীতে বাংলাদেশ -ভারত স্থল সীমান্তের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। সব কিছুই সম্ভব হয়েছে শান্তির জাদুকর দেশরত্ন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দুরদর্শিতায়।

নারী ও কন্যা শিশুদের সাক্ষরতা ও শিক্ষা প্রসারে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ইউনেস্কো " শান্তি বৃক্ষ (ট্রিঅবপিস)" স্মারক প্রদান করে শেখ হাসিনাকে।

জীবনের সব হারিয়ে যিনি মানুষের জন্য শান্তি খোঁজেন সমাজের মধ্যে, রাষ্ট্রের মধ্যে, বিশ্বের মধ্যে তিনি হলেন বঙ্গকন্যা, মুজিব কন্যা, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত দেশরত্ন শেখ হাসিনা। রাজনীতিতে, মানবতার কল্যাণে, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার হাতেই বিশ্ব শান্তির পতাকা শোভা পায়।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শান্তির পক্ষে এবং সর্বপ্রকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবেলায় তাঁর ‘সন্ত্রাসবিরোধী আঞ্চলিক ফোরাম’ গঠনের প্রস্তাব এ অঞ্চলের দেশসমূহের নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে ঈর্ষণীয় সাফল্য-অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এর মূল কৃতিত্ব শেখ হাসিনার নেতৃত্বের।

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশের সীমানায় আবদ্ধ না থেকে তা আজ বিশ্বসভায় উন্নীত ও যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বীকৃত। শান্তি, উন্নয়ন, সহাবস্থান, বৈষম্য দূর ও মানবাধিকারের পক্ষে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কী অভ্যন্তরীণ কী বৈদেশিক উভয়ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়।

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি, পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :