মাদারীপুরে সেনদিয়া গণহত্যা দিবস আজ: হত্যা করা হয় দেড়শ নারী-পুরুষ
প্রকাশ | ১৯ মে ২০২৩, ০৮:৩৫ | আপডেট: ১৯ মে ২০২৩, ০৯:২৪
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সেনদিয়া গণহত্যা দিবস আজ শুক্রবার (১৯ মে)। একাত্তর সালের এই দিনে রাজৈরের খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া, পলিতা, ছাতিয়ানবাড়ী ও খালিয়া গ্রামের প্রায় দেড়শ মুক্তিকামী মানুষ প্রাণ রক্ষা করতে আশপাশের আখ ক্ষেত ও ঝোঁপ-জঙ্গলে আশ্রয় নেন। কিন্তু পাকি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামসদের হাত থেকে রক্ষা পাননি তারা।
হানাদার বাহিনীর ব্রাস ফায়ারে শহীদ হন নারী-পুরুষ। অর্ধশত বছর পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারি অর্থায়ণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
চলতি বছর ৩ মার্চ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এ স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন। এতে খুশি শহীদ পরিবারের সদস্য, স্বজন ও স্থানীয়রা।
শহীদ পরিবারের সদস্য প্রত্যক্ষদর্শী শচীন বারিকদার ও স্থানীয়রা জানান, পাকিসেনারা মাদারীপুরের টেকেরহাট বন্দরে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে শুরু করে পৈশাচিকতা। ১৯৭১ সালের ১৯ মে বাংলা ৫ জ্যৈষ্ঠ বিকেল ৪টা থেকে ৫টা। পাকবাহিনী লঞ্চ যোগে গোপালগঞ্জ জেলার ভেন্নাবাড়ী ঘাটে নেমে চরচামটা নামক এলাকা থেকে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও অগ্নি সংযোগ শুরু করে।
সেখান থেকে পাকবাহিনী তাদের দোসরদের সহযোগিতায় নৌপথে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর হয়ে রাজৈরের কদমবাড়ী এলাকায় গান বোট থেকে নেমে সড়ক পথে বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে আসছে এ খবর পেয়ে খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া, পলিতা, খালিয়া ও ছাতিয়ান বাড়ী এলাকার হাজার হাজার নিরীহ জনগণ আঁখ ক্ষেতসহ বিভিন্ন ঝোঁপ জঙ্গলে আশ্রয় নেয়।
যারা বাড়ি ঘর ছেড়ে পালাতে পারেনি তাদেরকে ধরে নিয়ে যায় পশ্চিম সেনদিয়া ফকিরবাড়ির ভিটায়, সেনদিয়া বাওয়ালী ভিটায়, বারিকদার বাড়ীর উত্তর বাঁশ বাগানে, শচীন বারিকদারের বাড়ির দক্ষিণ খালপাড় এবং ছাতিয়ান বাড়ির পুকুর পাড়ে।
কারো চোখ বেঁধে, কারো হাত-পা বেঁধে, বাবা-মায়ের সামনে সন্তানকে, আবার সন্তানের সামনে বাবা-মাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আবার কাউকে বুটজুতা দিয়ে থেতলে ক্ষত-বিক্ষত করে আগুনে পুড়ে বা গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও অনেককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
দীর্ঘ সময় এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নরপিশাচরা ফেরার উদ্দেশ্যে পশ্চিম সেনদিয়া গ্রাম দিয়ে যেতেই আখ ক্ষেতে মানুষের শব্দ পেয়ে ব্রাস ফায়ার করে। নিমিষেই প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ।
এছাড়াও পাকিবাহিনীর দোসররা আখক্ষেত এবং ঝোঁপ জঙ্গলে তল্লাসি চালিয়ে মাটির গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ও ঝোঁপ-জঙ্গলের মধ্যে ৬টি স্পটে দেড় শতাধিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।
ওই ঘটনাকে স্মরণ করে স্থানীয় শহীদ পরিবারের সদস্যরা ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ ১৪১৬) সেনদিয়া গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন। স্মৃতিস্তম্ভে ১২৬ জন শহীদের নাম সম্বলিত একটি স্টোন লাগানো হয়েছে।
সেদিন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন পোপালগঞ্জ খ্রিস্টান মিশনের তৎকালীন রেভারেন্ড (মিশনারী) বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাদার মারিনো রিগন।
মাদারীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের সাবেক ইউনিট কমান্ডার মো. শাহজাহান হাওলাদার জানান, পাকিবাহিনীর ও তাদের দোসরদের হাতে খালিয়ার সেনদিয়া, পলিতা, ছাতিয়ানবাড়ী ও খালিয়া গ্রামের দেড় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন: ফসলি জমির মাটি কাটার দায়ে জমি ও ড্রেজার মালিকের কারাদণ্ড
হত্যার পর লাশগুলো ৬টি স্থানে গণকবর দিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে গণকবরগুলো চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এসএম)