আসুন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করি

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২৩, ১৫:৫৭

সাইদুর রহমান শাহিদ

এই যে আজ আমরা বাংলার মত এত সহজ সরল আর মায়ের ভাষায় পড়ছি,লিখছি,বলছি তা অর্জন করতে আমাদেরকে একসময় রক্তস্রোতে ভাসতে হয়েছে। সেই রক্তমাখা করুণ ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। ১৯৫২ সালে পাক শকুনেরা সর্বপ্রথম আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগে যায়। বিশেষত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যেন কোমড় বেধেই মাঠে নেমেছিল। ছাত্রদের প্রতিবাদের পরেও সে দমে যায়নি।  আবারো দ্ব্যর্থভাবে ঘোষণা করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার কথা। দেশের প্রতিবাদী দামাল ছেলেরা যেন একত্রিত হয়ে আন্দোলনে রাজপথে নামতে না পারে সেজন্যে পাকিস্তানি হায়েনারা জারি করে ১৪৪ ধারা। কিন্তু আমাদের দেশের দামাল ছেলেরা নির্ভীক, মাতৃভাষার প্রশ্নে আপোষহীন। তাঁরা নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে নেমে যায় রাজপথে। তাঁদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মায়ের ভাষাকে ভালোবাসা তরুণেরা। রাজপথ রঞ্জিত হতে থাকে তাজা রক্তে। সূচনা হয় নতুন এক ইতিহাসের প্রথম ভাষার জন্য জীবনদান। অতঃপর সেই রক্তের বিনিময়ে আমরা পাই বালা ভাষার স্বীকৃতি। সেই থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। স্মরণ করা হয় এ বাংলার সেই সূর্যসন্তানদের, সেই শহিদদের। রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে পাওয়া সেই বাংলা ভাষা যেন দিন দিন তার মর্যাদা হারিয়ে ফেলছে। আমরা যথাযথভাবে পারছি না মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে।নানাভাবেই আমরা আমাদের ভাষার মর্যাদাহানি করছি।বিভিন্ন বিদেশি ভাষার সাথে বাংলার সংমিশ্রণ ব্যবহার করছি।ভুল উচ্চারণ করে বাংলা ভাষা ব্যবহার করছি। লেখনী, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ছাড়াও বিভিন্ন প্রচারপত্রে ভুল বানান ছড়াছড়িতেও মর্যাদাহানি হচ্ছে ভাষার। সরকারি বিভিন্ন দফতর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজকর্মে কমছে বাংলা ভাষার ব্যবহার।  দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করানোর আগ্রহ।  অভিভাবকগণও ঝুকে পড়ছে তাতে। যার ফলে শিশুরা বাংলা ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলা চলে। আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা বাংলা ভাষাকে ইংরেজির বর্ণমালা দিয়ে লিখে প্রকাশ করছি। যা বাংলা ভাষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আর মর্যাদার দূষণ ঘটাচ্ছে। মৌখিক কথোপকথনেও আমরা ইংরেজির সাথে বাংলা আর বাংলার সাথে ইংরেজির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলা ভাষার শ্রুতিমধুরতা বিনষ্ট করে ফেলছি। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও কমছে বাংলা মাধ্যমে পাঠগ্রহণের প্রবণতা। প্রশ্নপত্র আর উত্তরপত্রও লেখা হচ্ছে ইংরেজিতে। যার ফলে দিনে দিনে বাংলা ভাষায় লেখালেখি কমতে শুরু করেছে। তাছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষত ফেইসবুকে ইংরেজি বর্ণে বাংলা লেখার ফলে বাংলা ভাষা তার স্বীয় মর্যাদা হারিয়ে ফেলছে। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আমাদেরকেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে হবে ভাষা শহিদদের। তাদের কাছে ভাষার মর্যাদা ব্যক্ত করতে হবে। দাপ্তরিক কাজকর্ম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে নির্ভুলভাবে বাংলা শিখতে হবে এবং তার প্রয়োগও করতে হবে। শিশুদেরকে বাংলায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলা একাডেমী পালন করতে পারে অনন্য ভূমিকা। আসুন এই ভাষার মাসে প্রতিজ্ঞা করি বাংলা ভাষাকে ভালোবাসার,মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার।

সাইদুর রহমান শাহিদ, শিক্ষার্থী, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়