মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামাল দেয়া কঠিন হবে

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২৩, ০৮:২১ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ০৯:১২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেই আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন- অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি ঠিক রেখে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামাল দেয়া কঠিন হবে। অপরদিকে বড় বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন চাপ না বাড়ে সেই আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীর। 

মহামারি করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। যার প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতেও। ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, জ্বালানির দাম বাড়ার চাপ পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয়ে চিন্তার ভাঁজ সাধারণ মানুষের কপালে। এমন বাস্তবতায় আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। অর্থনীতির রথে গতি কমাতে চায় না সরকার। তাই তো বাড়ছে বাজেটের আকার।
ব্যবসায়ীরা জানান, বেশিসংখ্যক জনসংখ্যাকে করের আওতায় আনা গেলে গুটি কয়েক মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমবে।

আরও পড়ুন>>জাতিসংঘে ভুল তথ্য দিয়ে আমন্ত্রণপত্র, অতঃপর মানবপাচার, মিলল চমকপ্রদ তথ্য

বিজিএমইএ পরিচালক খসরু চৌধুরী বলেন, ‘বিজনেস কোর্ডের জন্য আমাদের মাল ছাড়াতে কষ্ট হয়। ওয়ান পারসেন্ট সোর্সিং ট্যাক্স ছিল, সেখান থেকে পয়েন্ট ফাইভ জিরো করা এবং করপোরেট ট্যাক্স আছে, সেটাকে একটা ধাপে নিয়ে আসা দরকার।’ 

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, যারা কর দিচ্ছেন তাদের চাপে রাখবেন, আবার তাদের ওপর কর আদায় বাড়ানো হবে - এটা কোনোভাবেই সফলতা বয়ে আনবে না। এতে যারা ব্যবসা করছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন; দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।   
 
অর্থনীতিবিদরা বলছেন- অন্যসব বছরের তুলনায় এ বছরের বাজেট কিছুটা চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠবে। নির্বাচন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে এই বছরের বাজেটের সামনে বড় কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিতে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, আগের নির্বাচনী বছরগুলোকে যদি দেখেন, সেই সময় অর্থনীতি তেমন একটা সংকটের মধ্যে ছিল না। ফলে সে সময় জনতুষ্টির বাজেট করেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন বড় ধরনের কোন চাপ তৈরি হয়নি। কিন্তু এইবার যদি নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু জনতুষ্টির কথা বিবেচনা করেই বাজেট করা হয়, সেটা অর্থনীতির ওপর নতুন চাপ তৈরি করবে।

তিনি মনে করেন বাজেটে এই ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য রাখতে হবে। সেজন্য অতিরিক্ত খরচ এড়িয়ে চলা, এখনি প্রয়োজন হবে না এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনের আগে আগে সব সরকারই জনতুষ্টিমূলক বাজেট দিতে চায়। কিন্তু আর্থিক অবস্থা, রাজস্ব ঘাটতি, বৈদেশিক ঘাটতির কারণে সরকারের সামনে সে জন্য সুযোগ খুব সীমিত। সেরকম বড় কোন চেষ্টা করতে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটকে অ্যাডরেস করার জন্য বাজেটে যে সামষ্টিক কাঠামোটা আছে, সেটার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে হবে।’  

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অক্ষুন্ন রাখা ছাড়াও জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করার মতো প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যতোটা সম্ভব আসলে ঘাটতিটা কমিয়ে রাখতে হচ্ছে মূল্যস্ফীতির কারণে। সবদিক বিবেচনায় রেখে এক কথায় একটি জনবান্ধব বাজেট করা হচ্ছে। 

আগামী ১ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। সাত লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য বাজেটে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ধরা হতে পারে ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ। ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটে খরচ হবে ৩৬ শতাংশ। ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ধরা হতে পারে। সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়িয়ে খরচ করা হবে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। বড় অঙ্কের বাজেট বাস্তবায়নে চাপ থাকবে রাজস্ব আদায়ে। ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাজস্ব বোর্ডকে আয় করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তারপরও ঘাটতি থাকবে ৫.২ শতাংশের মতো। ঘাটতি মেটাতে ব্যংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য হতে পারে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করে ৩০ জুন চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে বাজেট ঘোষণা করা হবে।

ঢাকাটাইমস/২৫মে)