চুরির মামলা নিতে চান না অনেক ওসি: ডিবি প্রধান হারুন

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২৩, ১৬:০২ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১৬:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

থানায় একটি চুরির মামলা হলে কাজ করতে হয়, অনেক কষ্ট করতে হয়। তাই এই ভয়ে অনেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) চুরির মামলা নিতে চান না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, অনেক থানার ওসি মনে করেন, চুরির মামলা নিলে আসামিকে খুঁজতে হবে ও কষ্ট করতে হবে। এ কারণে অনেকে মামলা নিতে চান না। তবে আবার অনেকে (ওসি) কষ্টও করেছেন। আবার মোটরসাইকেল চুরি হলে অনেকে মামলা করতেও চান না। তাই আমি বলব মোটরসাইকেল চুরি হলে জিডি না করে মামলা করতে। থানা মামলা নিতে না চাইলে গোয়েন্দা কার্যালয়ে এলে আমরা অভিযোগ নেব।

সম্প্রতি ১২টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোর চক্রের এক সদস্যকে আটক করেছে (ডিএমপি ডিবি)। আটক ব্যক্তির নাম মো. জাকারিয়া হোসেন হৃদয়। এই ঘটনার বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। 

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, চার চাকার গাড়ি কেনার সামর্থ্য যাদের নাই, মোটরসাইকেল তাদের জন্য শুধু একটি দ্বিচক্রযানই নয়, একটি প্রয়োজনীয়তা, বাস্তবতা ও একটি স্বপ্ন। মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে গেলে স্বপ্নটা শুধু ভেঙে যায় না, বাস্তবতা হয়ে পড়ে কঠিন। এই চোর চক্রকে গ্রেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।

ডিএমপি ডিবির গুলশান বিভাগ ১২টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে গতকাল বুধবার দুই থেকে তিনটি মোটরসাইকেল চোর চক্রের এক সদস্যকে আটক করে। বুধবার (২৪ মে) হবিগঞ্জের লোকরা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।  এই চোর চক্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন। 

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১০ মে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় ২৩ মে মালিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভাটারা থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটির ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগ তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একটি সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্রের সন্ধান পায়। সেই সূত্র ধরে বুধবার হবিগঞ্জের লোকরা বাজারের ‘বন্ধু মটরস’ গ্যারেজ থেকে ১২টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ হৃদয় নামের একজনকে আটক করা হয়।

ডিএমপির এই প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রটি কয়েকটি ধাপে মোটরসাইকেল চুরি ও বিক্রির কাজটি সম্পন্ন করে থাকে। এ চক্রের একজন সদস্য স্পটে থাকে। সে মোটরসাইকেল মালিকের গতিবিধি লক্ষ করে। অন্য সদস্যরা মোটরসাইকেলটি কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে সঙ্গে থাকা মাস্টার চাবি দিয়ে লক ভেঙে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে চোরাই মোটরসাইকেলটি কয়েকটি হাত বদল হয়। এভাবে হবিগঞ্জের লাখাই রোডের বন্ধু মটরস গ্যারেজ পর্যন্ত পৌঁছায়। সেখানে কিছু যন্ত্রপাতি পরিবর্তন, চ্যাসিস ও ইঞ্জিন নম্বর পাঞ্চ করে আবার বিক্রি করে দেয়।

আটক বরাত দিয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নাসিরনগর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি করে মোটরসাইকেল চুরি করে ‘বন্ধু মটরস’ গ্যারেজের মালিকের মাধ্যমে বিক্রি করে আসছে। এরা একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য।

মোটরসাইকেল নিয়ে স্কুল বা মার্কেটে গেলে যেখানে-সেখানে না রেখে নির্ধারিত জায়গায় পার্কিং করা এবং চুরি হলে সঙ্গে সঙ্গে থানায় মামলা করার আহ্বান জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/এএ/কেএম)