অনলাইনে বন্ধুত্বের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা, নাইজেরিয়ানসহ আটক ৪

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২৩, ১৮:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ-সরল মানুষকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায় একটি চক্র। এরপর তাদের কাছে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে। একপর্যায়ে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠাতে চায় তারা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভুক্তভোগীকে ফোন করেন। পরে ভুক্তভোগী  বন্ধুত্বের মান রাখতে ওই পার্সেল নেওয়ার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের অধিনায়ক বলেন, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান এলাকায় বসবাস করেন ২৬ বছর বয়সী এক নারী। তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে বিদেশি এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। একপর্যায়ে বিদেশি ব্যক্তি ১৭ মে ওই নারীর ঠিকানায় একটি পার্সেল পাঠিয়েছেন বলে জানান। পার্সেলটি বিমানবন্দর থেকে সংগ্রহ করতে বলেন তিনি। পরদিন হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমসের পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা এক নারী ভুক্তভোগীকে ফোন করেন।

ফোনে জানানো হয়, তার নামে বিদেশে থেকে একটি মূল্যবান পার্সেল এসেছে। পার্সেল ডেলিভারি করতে কাস্টমস চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা দিতে হবে। মূলত সবই প্রতারণার অংশ। এভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে একটি চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এই চক্রে বাংলাদেশিদের সঙ্গে নাইজেরিয়ান নাগরিকও রয়েছেন।

র‌্যাবের ভাষ্যমতে, ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন- নাইজেরিয়ার নাগরিক চার্লস ইফেনডি উডিজিও ও ফ্রাঙ্ক কোকো ওব্রিক্স । আর দুই বাংলাদেশি হলেন শফি মোল্লা এবং মোছা. মৌসুমি খাতুন।

র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, বুধবার র‌্যাবের একটি দল রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং কদমতলীর শামীমবাগে অভিযান চালিয়ে দুই বিদেশি নাগরিকসহ চারজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, আটটি মোবাইল ফোন ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া ইনভয়েস উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করেন যে, পার্সেল ডেলিভারির জন্য কাস্টমস চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করার কথা বলেন তারা। এরপর ভুক্তভোগী ওই নারী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা দেন। এরপর সিকিউরিটি বাবদ আরও ৩০ হাজার টাকার জন্য বিভিন্নভাবে তাকে চাপ দেওয়া হতে থাকে। এরপর ওই নারীর কথা অনুযায়ী আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠান ভুক্তভোগী।

এরপর পার্সেল দাবি করলে ওই নারী ফোনে জানান, তার পার্সেল বাসায় পৌঁছে যাবে। এরপর নানা কথা বলে আরও আট হাজার ৩২০ টাকা বিকাশের মধ্যমে পাঠাতে বলা হয়। এরপর ভিকটিম তার আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আটক ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ-সরল মানুষকে ‘ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট’ পাঠায়। এরপর তাদের কাছে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিয়ে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠাতে চায় তারা।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভিকটিমকে ফোন করে। পরে ভিকটিম বন্ধুত্বের মান রাখতে উক্ত পার্সেল গ্রহণ করার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়।

আটক নাইজেরিয়ার দুই ব্যক্তির বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, আটক হওয়া বিদেশি নাগরিকেরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াবাসায় অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশা শুরু করেন। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে এই অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/এএ/কেএম)