‘অবৈধ বিয়ে’: ক্রিকেটার নাসির-তামিমা দম্পতির কী শাস্তি হতে পারে?

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৩, ১০:১৩ | আপডেট: ২৬ মে ২০২৩, ১১:১৯

আশিক আহমেদ, ঢাকা টাইমস

অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া ও ব্যভিচারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে  ক্রিকেটার নাসির হোসেনের গত বছরের সাজা হতে পারে। আর তামিমা সুলতানা? স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়ে অন্যজনকে বিয়ের দায়ে কত বছরের সাজা হতে পারে তার? আইনজীবী বলছেন, সাত থেকে আট বছরের সাজা হতে পারে দুজনের।

আলোচিত এই মামলায় তামিমা সুলতানার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছে রাকিব হাসান ও তামিমার ১০ বছর বয়সী সন্তান রাশফিয়া হাসান তুবা। আগামী ২৯ মে এই মামলায় মায়ের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেবে রাসফিয়া হাসান তুবা।

মায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে ১০ বছরের শিশুসন্তান। আগামী ২৯ মে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে তুবার।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাকিবের মামলায় নাসির-তামিমার বিচার শুরু হয়। এরপর একে একে মামলা স্থগিতের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

আর তাই তো তালাক যথাযথ হয়নি জেনেও তামিমাকে বিয়ের অভিযোগে করা মামলায় রাকিব এরই মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দাখিল করেছেন সব প্রমাণও। তবে এ মামলায় সবচেয়ে বড় আদেশ আসে গত ২১ মে (রবিবার)।  রাকিব-তামিমার ১০ বছর বয়সী সন্তান রাশফিয়া হাসান তুবা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছে। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

আরও পড়ুন>> জেনে নিন ১৬৪ ধারার জবানবন্দি কিভাবে সাজানো-পাতানোও হয়!

রাকিবের আইনজীবী ইশরাত হাসান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, ‘এ মামলার চাক্ষুস সাক্ষী রাশফিয়া হাসান তুবা। সে সঠিকভাবে বলতে ও উত্তর দিতে পারে। অর্থাৎ সাক্ষী হিসেবে উপযুক্ত। তাই আদালত শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আগামীতে তাকে আমরা সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করব।’

ওই আইনজীবীর ভাষ্য, এ মামলার মোট সাক্ষী ১০ জন। এর মধ্যে কেবল রাকিব সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে বেশিরভাগই সরকারি সাক্ষী। সেই তালিকায় আছেন পোস্ট মাস্টার জেনারেল, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, লা মেরিডিয়ানের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্নেল। এ হোটেলের নিরাপত্তার প্রধান পরিচালককেও আদালত ডেকেছেন।

অভিযোগ গঠনের দিন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিলেন নাসির-তামিমা। তবে মামলা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হলে দুজনেরই সাত থেকে আট বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

রাকিবের আইনজীবী বলেন, ‘তামিমার বিরুদ্ধে ডিভোর্স না দিয়ে অর্থাৎ অবৈধ বিয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ধারায় সাত বছরের সাজা হতে পারে। এছাড়া ফৌজদারি ধারায়ও সমান সাজার কথা বলা আছে।’

অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান বলেন, ক্রিকেটার নাসিরের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। একটি ব্যভিচারের, এতে পাঁচ বছর সাজা হতে পারে। আরেকটি অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে তিন বছরের সাজা হতে পারে।’

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমার স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে আদালতে এ মামলা করেন। এরপর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক (নি.) শেখ মো. মিজানুর রহমান তিনজনকে দোষী উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাকিবকে তালাক দেননি তামিমা। আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোনো নোটিশও পাননি। তামিমা উল্টো জালিয়াতি করে তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেওয়ার ফলে তামিমা তাম্মী এখনো রাকিবের স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মীর বিয়ে অবৈধ।

২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি নাসির-তামিমাসহ তিন আসামি আদালতে উপস্থিত হন। এরপর তাদের নির্দোষ দাবি করে অব্যাহতির আবেদন করেন আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু।

অন্যদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। এরপর ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালত নাসির-তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে এ মামলার অপর আসামি তামিমার মা সুমি আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই বছরের ৬ মার্চ মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করেন নাসির ও তামিমা। অন্যদিকে তামিমার মা সুমি আক্তারকে অব্যাহতির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করে বাদীপক্ষ। শুনানি শেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদ রিভিশন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তারকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আদেশ বহাল রাখেন।

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/এএ/এফএ)