শান্তিরক্ষী দিবস

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় ব্যাপক প্রশংসিত বাংলাদেশ পুলিশ

প্রকাশ | ২৮ মে ২০২৩, ১৮:২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

১৯৮৯ সালে আফ্রিকান দেশ নামিবিয়ায় মিশনের মাধ্যমে শান্তিরক্ষায় যাত্রা শুরু বাংলাদেশ পুলিশ। এরই মধ্যে প্রায় ২১ হাজার ২৮৪ জন সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। সংঘাত ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক প্রশংসা ও সুনাম কুড়িয়েছেন তারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশের বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য এখনও কাজ করেছেন।

 

জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ ৩৩ বছর পূর্ণ করেছে। আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি, সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোর স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা এবং নিরপেক্ষভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২১ টি দেশের ২৩টি মিশনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন পুলিশ সদস্যরা। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, সাইপ্রাস, সাউথ সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, লিবিয়া ও সুদান এ সাতটি দেশে বাংলাদেশ পুলিশের ৫১২ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। এছাড়া ২০১৩ সালে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারমিশন কো-অপারেশনের আওতায় ২৪ ঘণ্টায় বিশেষায়িত কন্টিনজেন্ট সাউথ সুদানে পাঠায়, যা শান্তিরক্ষার ইতিহাস বিরল ঘটনা।

 

১৯৪৮ সালের ২৯ মে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সিনাই অঞ্চলে প্রথম জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। বিশ্বের ১২০ টিরও বেশি দেশের সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক নাগরিকরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। যাদের মধ্যে অনেকে দায়িত্বপালনকালে নিহত হয়েছেন।

 

প্রতি বছর ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালন করা হয়। এদিন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করে সরকার। এ বছর আগামীকাল সোমবার দিনটি উদযাপন হবে।

 

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতারে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

 

পুলিশ সদরদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে পিসকিপার্স রান-২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে।

 

২০০০ সাল থেকে পুলিশের নারী পুলিশ কর্মকর্তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের ১৫৭ জন নারী পুলিশ শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের ১ হাজার ৭৬৬ জন নারী শান্তিরক্ষী বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষীরা নানা প্রতিকূলতার মাঝে প্রচন্ড মানসিক শক্তি নিয়ে মানুষকে আপন করে নিয়েছেন; তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছেন, তেমনি আফ্রিকা এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তৃণমূল পর্যায়ে পুলিশের সেবা প্রদান, পুলিশের প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো পুর্নবিন্যাস ও পুনর্গঠন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক ভাবে সমাদৃত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষীরা দুর্গম ভৌগলিক পরিবেশ ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও প্রচন্ড মানসিক শক্তি নিয়ে মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বশান্তি রক্ষায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছে।

 

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ও অনন্য অবদান রয়েছে, যা দেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ।

 

শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মোতায়েনের জন্য জাতিসংঘের নিয়মিত কোনো সৈন্য বা পুলিশ বাহিনী নেই। সদস্য রাষ্ট্রসমূহই প্রয়োজনে তাদের নিজস্ব বাহিনী দিয়ে জাতিসংঘকে সহায়তা করে। প্রথম দিকে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ান দেশসমূহ সৈন্য ও লোকবল দিয়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে সচল রাখত। কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধের অবসান ও সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর উন্নত দেশ সমূহ সৈন্য সরবরাহ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এই অবস্থায় এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশসমূহ এগিয়ে আসে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সিংহ ভাগ পোশাকি সদস্য সরবরাহ করে।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/এসএস/কেএম)