দেবীদ্বারে জঙ্গলের খুপড়িতে ১৭ বছর কাটিয়ে দেওয়া মুজিবুরের পাশে উপজেলা চেয়ারম্যান

প্রকাশ | ২৮ মে ২০২৩, ২০:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

জঙ্গলে খুপড়িতে শিয়াল, সাপ, বিচ্ছুসহ জীবজন্তুর সঙ্গে অর্ধাহার-অনাহারে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ১৭ বছর ধরে বসবাস মুজিবুর রহমানের। বয়স তার প্রায় ৬০ বছর। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর ঘটনাস্থলে ছুটে যান কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। শুনলেন চিরকুমার মুজিবুর রহমানের মানবেতর জীবনযাপনের গল্প।

রবিবার দুপুরে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ১০ নম্বর গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া মৌলভী বাড়ির পাশে একটি জঙ্গলে যেয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে।

বিশাল একটি জঙ্গলের ঝোপ-বাঁশঝাড় পেড়িয়ে জঙ্গলের মধ্যভাগে যেয়ে দেখা যায় পলিথিনে মোড়ানো ছাউনির একটি ছোট খুপড়িতে বসে আছেন ৬০ বছর বয়সী চিরকুমার মুজিবুর রহমান ।

প্রশাসনের লোকজন আসার সংবাদে বেরিয়ে আসেন খুপড়ি থেকে। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে খুপড়িতে বসবাস করার জীবনের গল্প শোনালেন মুজিবুর। অশ্রুসিক্ত নয়নে শুনলেন সবাই। অর্থ-বিত্তে সাঝানো সংসার সৎ ভাইদের রোষানলে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় তাকে জঙ্গলেই ঠাঁই নিতে হয়েছে। জঙ্গলের খুপড়িতে থাকায় বিয়েটাও করতে পারেননি তিনি।

মুজিবুর রহমান জানান, তার বাবা মরহুম লাল মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে। এ সংসারে মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। প্রথম সংসারে দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সংসারে মো. মুজিবুর রহমান। তার বাবা লাল মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎ ভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। মুজিবুর কাইচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে সৎ ভাই জহিরুল ইসলামকে বিএ পাশ করান। সেই জহিরুল ইসলামই তার পৈত্রিক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নেয়। তাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ২০০৭ সাল থেকে জঙ্গলে খুপড়ি বানিয়ে ঠাঁই নেন মুজিবুর। বিয়ে করে বৌ রাখার ঘর নেই, তাই বিয়েটাও করতে পারেননি। বলেন, ‘মিলের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে ইলেক্ট্রিক লাইনের কাজ শুরু করি, বাম চোখটিও নষ্ট হয় গেছে। বয়স হয়েছে, তাই এখন কাজে নিতে চায় না কেউ। অর্ধাহার-অনাহারে, রোদ, ঝর-বাদলে, শেয়ালের হাক-ডাকের মাঝেই খুপড়ির মধ্যেই থাকি। কখনো লাকরির চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ করে লবন মরিচ দিয়ে খাই, কখনো শুকনা খাবার খেয়ে থাকি।’ তিনি দুঃখ করে আরো বলেন, ‘শিয়াল-শাপ-বিচ্ছু-মশা আমার ক্ষতি করে নাই- মানুষ যা করেছে।’

এ ব্যপারে মুজিবুরের ভাই জহিরুলকে পাওয়া যায়নি। জহিুরুলের বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন জানান, আমার কাকা অভিমানী, আমার দাদার জায়গা জমি ভাগ হয়নি এখনো। তবে চাচা কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছেন। চাচার পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নাই।

১০ নম্বর গুনাইঘর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কুমিল্লা (উত্তর) জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে জেনেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, মজিবুর রহমানকে তার বাবার জমির কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ডের সঙ্গে  দেখা করার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তার পাওনা জমি তাকে উদ্ধার করে দেওয়া হবে। না হয় আবাসনের ব্যবস্থা করে দেব।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষণিক চক্ষু চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দেন এবং স্বচ্ছলতা আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এর আগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাশিকাড়া বাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের শান্তনা দেন এবং ছয় ব্যবসায়ীকে ৯০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/কেএম)