ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে

প্রকাশ | ২৮ মে ২০২৩, ২১:৫৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  • পরীক্ষায় ৫০০ টাকার বেশি নিলে ব্যবস্থা
  • রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা কঠিন
  • এডিস মশা নিধনসহ ডেঙ্গু রোধে ১১ দফা সুপারিশ

আগাম বৃষ্টির কারণে এ মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা বেশি। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যাও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। শুরুতেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে ১১ দফা সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রবিবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ চিকিৎসায় আমরা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করে দিয়েছি। এই গাইডলাইন অনুযায়ী সবাইকে চিকিৎসা দিতে হবে।

তিনি বলেন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষার ফি বাবদ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নিতে পারবে। এর চেয়ে বেশি নেয়া হলে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর । তবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষার ফি ১০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, কোনো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য প্লাটলেট প্রয়োজন হলে জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা ল্যাব খোলা রাখতে হবে। সরকারিভাবে ২১টি সেন্টারে প্লেটলেট সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, কোনো রোগীর প্লেটলেট প্রয়োজন হলে উল্লেখিত ২১টি সেন্টার থেকে সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মহানগরীর পর দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী কক্সবাজারে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলতি বছরেও সহস্রাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে সেখানে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের কালচার আলাদা হওয়ায় এ ব্যাপারে সেখানে সেভাবে কাজও করা যায় না।

নাজমুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য পানি সরবরাহের ব্যবস্থা খুব কম। ফলে তারা বিভিন্ন গর্ত থেকে পানি সংগ্রহ করেন এবং অনেক সময় পানি খোলা পাত্রে রেখে দেন। এ ছাড়া তাদের মধ্যে সচেতনতার বিষয়টি আরও কম।

তিনি বলেন, ঢাকায় জনগোষ্ঠী বেশি হলেও এখানে জায়গা আছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কম জায়গায় মানুষ বেশি। ফলে সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্য এলাকার তুলনায় বেশি। এখন পর্যন্ত সেখানে এক হাজার ৬৬ জনের ডেঙ্গুরোগ শনাক্ত হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীতে রোগী বাড়লেও কোন এলাকায় বেশি সে সম্পর্তে জানতে চাইলে কোনো তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় যেখানে ঘনবসতি বেশি সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। তবে নির্দিষ্ট করে কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি সেটি বলা এই মুহূর্তে কঠিন। রোগীদের তথ্য যাচাই করে তারপর বলা যাবে। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।

রোগী জটিলতার ব্যাপারে অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নগরী গড়ে উঠছে। ঠিক ব্রাজিলের মতোই। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেই আমরা প্লাটিলেটকে সামনে আনি। অথচ এটি সেভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের উচিত সচেতনতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।’

তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের একটি ভুল ধারণা রয়েছে। ডেঙ্গু হলেই আমরা প্লেটলেটের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে যাই। কিন্তু ডেঙ্গু আসলে প্লেটলেট ডিজঅর্ডার নয়, এক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারে প্লাজমা লিকেজ। এককথায় বলতে গেলে ডেঙ্গুতে প্লেটলেটের কোনও ভূমিকা নেই। প্লেটলেটের চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর জন্য বেশি দরকার ফ্লুইড।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/আরকেএইচ/কেএম)