"দলবিধি" রাষ্ট্রপতি সায়েমের

জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা একটি চরম মিথ্যাচার

সোহেল সানি
 | প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২৩, ০৯:৩৭

"Who is a better Awami League than me? I have transmitted the directives of Bangabandhu from Chittagong Radio Station."

১৯৭৬ সালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এ এস এম সায়েম কর্তৃক আহুত বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো। জেনারেল জিয়ার আরও একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তখন তিনি সেনা উপপ্রধান। ৪৬তম ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিল বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর দিলে জিয়া বলেছিলেন,"So what? Vice President is there, You should uphold the constitution, Get your troops ready"

জেনারেল জিয়াউর রহমানের দুটি মন্তব্যেই সারবস্তু বলে কিছু ছিলো না। কেননা সংবিধান অনুযায়ী তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম নন, বরং অসাংবিধানিক পন্থায় খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন এবং এক সপ্তাহের মাথায় জেনারেল জিয়া সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেন তারও সারবস্তু বলে কিছু ছিলো না। বরং মোশতাকের পতনের পর খালেদ মোশাররফ কর্তৃক নিযুক্ত রাষ্ট্রপতি সায়েমকে হটিয়ে কিভাবে ক্ষমতা দখল করা যায়, সেই চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন তিনি।

বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২২ জুলাই "দলবিধি আইন-১৯৭৬" জারি করেন (পরে সংশোধন করে ৪ আগস্ট)। রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হতে বলা হয় ওই দলবিধির অধীনে। এই দলবিধি ঘোষণার আগেই ২২ মার্চ নির্বাচনী এলাকার সীমা নির্ধারণের খসড়া তৈরি করা হয়। ৮ জুলাই বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলামকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ৯ অক্টোবর নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তরই ছিলো রাষ্ট্রপতি সায়েমের প্রধান লক্ষ্য। রাষ্ট্রপতি পদের পাশাপাশি বিচারপতি সায়েম তখনও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তিনি বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকও করেন। স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে শুরু হয় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। ধীরে ধীরে জেনারেল জিয়া পর্দার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসেন। ২৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি সায়েমের সঙ্গে বঙ্গভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিন বাহিনী প্রধান। সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করার জন্য জোর তাগিদ দেন নৌবাহিনী প্রধান এম এইচ খান ও বিমান বাহিনী প্রধান এম জি তোয়াব।

রাষ্ট্রপতি সায়েম এ সময় লক্ষ্য করেন যে, মন্ত্রীর সমমর্যাদাসম্পন্ন তাঁর বিশেষ সহকারী বিচারপতি আব্দুস সাত্তারও জেনারেল জিয়ার পক্ষে ওকালতি করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। তারপরও সায়েম নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর ছিলেন। কিন্তু জেনারেল জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়েই নির্বাচন বিরোধী কলাকৌশল প্রয়োগ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সংসদ নির্বাচনের তোরজোর স্তিমিত হয়ে যায়। জেনারেল জিয়ার এবার রাষ্ট্রপতির পদটিও চাই। এক্ষেত্রে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমের সঙ্গে। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালর ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদটিও দখল করেন সায়েমকে হটিয়ে। প্রকৃতপক্ষে জেনারেল জিয়ার উত্থান খুনী রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের হাত ধরে। মোশতাক রাষ্ট্রপতি হওয়ার সপ্তাহের মাথায় ২৪ আগস্ট সেনাপ্রধান করেন জিয়াকে। কিন্তু ৩ নভেম্বর সংঘটিত হয় সামরিক অভ্যুত্থান। ফলশ্রুতিতে জেনারেল খালেদ মোশাররফকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করতে বাধ্য হন মোশতাক। কিন্তু এর মধ্যে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যায় মোশতাকের ৮৩ দিনের রাজত্বের অবসান ঘটায়। মোশতাকের আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলের নাম বলতে গিয়ে ধমকের মুখে পড়েন। ৬ নভেম্বর সেনাপ্রধান জেনারেল খালেদ মোশাররফের পছন্দেই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েম রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। একদিনের মাথায় ৭ নভেম্বর জাসদপন্থী বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার প্রবক্তা কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় পাল্টা অভ্যুত্থান। নিহত হন খালেদ মোশাররফ। বাসভবনে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে আবারও সেনাপ্রধানের পদে আসীন হন জিয়া।

প্রসঙ্গত জেনারেল জিয়াউর রহমানের জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকী এলেই বিএনপি নেতারা এমনকি বুদ্ধিজীবী মহলেরও কেউ কেউ দাবি করেন যে, "জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা এবং তার কারণেই আওয়ামী লীগের ফের জন্ম হয়েছে।" যথারীতি এবারও বিএনপির পোস্টারে জেনারেল জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। উচ্চ আদালত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। অপরদিকে যে রাজনৈতিক দলবিধি-১৯৭৬ -কে সূত্র ধরে জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলা হচ্ছে - তাও একটি চরম মিথ্যাচার মাত্র। তবে আশ্চর্য যে, আওয়ামী লীগকেও এর বিরোধিতা করতে দেখা যাচ্ছে না। বরং এ প্রশ্নে তারা বরাবরই নীরব থাকছে! অথচ তথ্য-উপাত্ত বলছে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বিচারপতি এ এস এম সায়েম। "রাজনৈতিক দলবিধি-১৯৭৬" জারি করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক সায়েম। যখন জিয়া সেনাপ্রধান হিসাবে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী প্রধানের ন্যায় উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মাত্র। প্রকৃতপক্ষে "দলবিধি" আইন রাষ্ট্রপতির আদেশের বিষয়। যদি বিএনপির দাবি অনুযায়ী উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়া যদি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হন, তাহলে তো অপর দুই উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এম এইচ খান এবং এম জি তোয়াবও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। বিএনপি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করছি ইতিহাস বিকৃত না করে এ প্রশ্নে বিচারপতি সায়েমের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটি পাঠ করুন। তিনি লিখেছেন,"আমি সরকারের ওপর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিলাম। প্রথমে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর প্রথমে আমাকে ছাড়তে হয় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদটি। তারপর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল আমার বিশেষ সহকারী বিচারপতি সাত্তারের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য বললো, জিয়ার অধীনে তারা কাজ করতে চান...।

আমি অপরাহ্ন ২ টা ৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। বড় দুঃখ, নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারলাম না। শুধু এই সান্ত্বনাটুকু নিয়ে চলে যাচ্ছি যে, বিশাল ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমান, যাঁর নামে শুরু হয়ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং যাঁর নামে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাধ্যমে তা শেষ হয়, তাঁর হত্যা ও জেল হত্যায় যে ভয়াবহ বিপজ্জনক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি বলে আমার ধারণা। "

রাষ্ট্রপতি সায়েম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই ছিলো তাঁর প্রধান লক্ষ্য।

কিন্তু ১৩ নভেম্বর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রধান মওলানা ভাসানী বলেন, 'শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ নির্বাচন চায় না।'

প্রসঙ্গত এর মাত্র ৪ দিনের মাথায় ১৭ নভেম্বর মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ইন্তেকাল করেন। সায়েম লিখেছেন, আমার অধিকাংশ উপদেষ্টারা নির্বাচন চাচ্ছিলেন না। অধিকাংশই সেনানিবাসে যোগাযোগ রাখতেন। নির্বাচন হলে রাজনীতিবিদের হাতে ক্ষমতা যাবে, মানে নিজেদের চাকুরী হারানোর ভয়ে ছিলেন তারা।

জেনারেল জিয়া সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ কেড়ে নিয়ে তার লক্ষ্য পূরণের পথে হাঁটতে শুরু করেন। পরে রাষ্ট্রপতির পদটিও দখল করে ৩০ মে দেশে গণভোট দেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার প্রতি আস্থা আছে কি নেই - তা যাচাই করতে। মানে "হ্যা" - "না" ভোটের ইতিহাস রচনা করে ৯৯ শতাংশ ভোট হ্যাঁ বাক্সে ঢুকিয়ে নেন। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি পদে থেকেই শুধু নয়, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, সেনাপ্রধান সব পদে থেকেই। তিনি মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীকে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি হন। এরপর জাগদল ও পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গঠন করেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। ভাসানী ন্যাপের নির্বাচনী প্রতীক "ধানের শীষ" ভাগিয়ে নেন তিনি দলটির শীর্ষ নেতাদের মন্ত্রীত্ব দিয়ে। যাহোক ১৮ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের ওই সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২০৭টিই কব্জা করে নবগঠিত দল বিএনপি। তারপর সংসদে স্বীয় শাসনামলের বৈধতা দেন সংবিধান পঞ্চম সংশোধনী বিল পাস করিয়ে। যদিও সর্বোচ্চ আদালত ওই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।

বলা বাহুল্য বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা বড়ই কঠিন হয়ে পড়েছিলো।

রাজনৈতিক দলবিধি আইনে ১০ নম্বর ধারা নামে এমন একটি ধারা সন্নিবেশিত করে বলা হয়ে যে, মৃত বা জীবিত কোন ব্যক্তির নামে বন্দনা করা যাবে না। মানে "ব্যক্তিপূজা" করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর নাম যেনো আওয়ামী লীগ ব্যবহার করতে না পারে সেজন্যই এই ধারা ব্যবহার করা হয়। ওই বিধানের কারণে আওয়ামী লীগকে ইশতেহার থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দিতে হয়। নতুন করে ছাপাতে হয় ইশতেহার। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা তখন কারাবন্দী। ফলে তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষে আবেদন করেন। কিন্তু দলীয় ইশতেহারে বঙ্গবন্ধুর নাম থাকায় আইন মন্ত্রণালয় আবেদনটি ফেরত পাঠায়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দিয়েই ফের আবেদন করতে হয়। ১৯৭৬ সালের ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারি অনুমোদনলাভ করে। দলের আত্মপ্রকাশের পরপরই নেমে আসে চরম আঘাত। নভেম্বরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সফর করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যার বিচার দাবি করেন জনসভা থেকে। এর জের ধরে সরকার সাজেদা চৌধুরী, সালাউদ্দিন ইউসুফ ও মোজাফফর হোসেন পল্টুকে গ্রেফতার করে। সরকারের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ চলে যান আত্মগোপনে। নয়া আহবায়ক করা হয় ফণিভূষণ মজুমদারকে। তিনিও পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপর মিজান চৌধুরী ও মোল্লা জালাল উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালের ৩ এপ্রিল ইডেন গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। আহবায়ক নির্বাচিত করা হয় সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে। ১৯৭৮ সালের কাউন্সিলে আবদুল মালেক উকিলকে সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এতে দ্বিখণ্ডিত হয় আওয়ামী লীগ। মিজানুর রহমান চৌধুরী সভাপতি ও অধ্যাপক ইউসুফ আলী সাধারণ সম্পাদক করে আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয় আরও একটি আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ (মালেক) মূল আওয়ামী লীগ রূপে পরিচিত হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে পৌঁছে। ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল আহবান করা হয়। সভাপতি পদে তৎকালীন সভাপতি সাবেক স্পীকার আবদুল মালেক উকিল ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সরকারের তিন মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী ও ডঃ কামাল হোসেনের নাম প্রস্তাব হিসেবে উঠে আসে। কাউন্সিলররা সভাপতি নির্বাচনের জন্য সাবজেক্ট কমিটিকে দায়িত্ব অপর্ন করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সাংগঠনিক জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা ছিলেন সাবজেক্ট কমিটির সদস্য। এই চার প্রার্থীর ওপরই দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করার। কিন্তু তারা ঐকমত্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেই সভাপতি মনোনীত করে সাবজেক্ট কমিটির কাছে প্রস্তাব করা হলে সে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। শেখ হাসিনার নাম সভাপতি হিসেবে ঘোষিত হলে কাউন্সিলরা মুহূর্মুহু করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানান। একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব কায়েমের জন্য ৩টি সহসভাপতির পদ বিলুপ্ত করে ১০ সদস্যের সভাপতি মন্ডলী গঠনের বিধান করা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা দিল্লিতে বসেই সফররত নেতৃবৃন্দকে সিদ্ধান্ত দেন যে, তিনি কোনভাবেই সভাপতির পদ গ্রহণ করতে চাচ্ছেন না। তখন নেতৃত্বের ভারসাম্য রক্ষায় সভাপতি মন্ডলী গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সভাপতি মন্ডলীর এক নম্বর সদস্য হওয়ার কথা ছিলো শেখ হাসিনার। কিন্তু কাউন্সিলে তাঁকেই সভাপতি করা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভাষ্যমতে তাঁকে এবং তাঁর ছোট বোন রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বপ্রথম দাবি জানান আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু এবং জনমত সৃষ্টির জন্য যুবলীগের পক্ষ থেকে একটি লিফলেটও প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে সভাপতি মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠলে শীর্ষ নেতারা দিল্লিতে রাজনৈতিকভাবে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনার শরণাপন্ন হন। সভাপতি নির্বাচিত করার পর আবারও দিল্লিতে যান নেতারা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সভাপতি মন্ডলীর নবনির্বাচিত সদস্য

আব্দুস সামাদ আজাদ ও কোরবান আলীর সঙ্গে। সেই থেকে জেল-জুলুম নির্যাতন, নিপীড়ন ভোগ করেন তিনি। ১৯ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। রাজনীতির চারদশক পার করেছেন তিনি। যার মধ্যে দুদশকই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই শেখ হাসিনার পার করতে চলেছেন চারটি মেয়াদ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ তাইতো আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :