সাতক্ষীরার উপকূলে সফটসেল কাঁকড়া চাষে আশার আলো

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২৩, ১৩:০৯

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সুন্দরবনের মাছ, কাঠ ও মধু সংগ্রহ করেই চলত এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা। সুন্দরবনের হিংস্র বাঘ আর ডাকাতদের সঙ্গে যুদ্ধ করেই পরিবারের সদস্যদের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হত তাদের। বর্ষা মৌসুমে আবার ভেড়ীবাঁধ ভেঙে বাড়ি ঘর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা। এসব পরিস্থিতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারলেও বছরের অধিকাংশ সময় বনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পেশা নিয়ে শংকিত ছিলো শ্যামনগরের উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

তবে নরম খোলসের কাকড়া চাষে পাল্টে গেছে উপকূলীয় এলাকার প্রায় দুই হাজার বনজীবীর জীবন যাত্রা। আর্থিকভাবে হয়েছেন স্বচ্ছল।

চাষিরা জানান, শক্ত খোলসের কাকড়া ধরে প্রথমে দুটি কানসহ ৬টি নলি (হাত-পা) কেটে লোনা পানির প্লাস্টিকের বক্সে রাখা হয়। দেওয়া হয় খাবার। বক্সে রাখার ৩ ঘণ্টার মধ্যে কাকড়াটি তার শক্ত খোলস পরিবর্তন করে নতুন খোলস নেয়। সে সময় কাকড়াটি একেবারে নরম থাকে। ৩ ঘণ্টার মধ্যে ওই কাকড়া তুলতে না পারলে কাকড়াটি পুনরায় শক্ত খোলসে পরিণত হবে। সে কারণে প্রতি ৩ ঘণ্টা পর পর একজন চাষিকে প্রতিটি বক্স চেক দিতে হয়। শক্ত কাকড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়। শক্ত থেকে নরম খোলসে পরিণত করার পর ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।

২০১৪ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে উপকূলীয় এলাকায় নরম খোলসের কাকড়া চাষ শুরু হয়। এটি বিদেশের মাটিতে বেশ জনপ্রিয় খাবার। তবে সে সময় চাষিদের প্রশিক্ষণ না থাকায় সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছিল। অনেকের আর্থিক সংকটের কারণেও প্রশিক্ষিত হলেও চাষ শুরু করতে পারছিলেন না। বিশ্ব বাজারে নরম খোলশের কাকড়ার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চাষিদের পাশে দাঁড়ান বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন ও পিকেএসএফ। প্রশিক্ষণের পর আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে চাষিদের সাবলম্বীতে তারা ভূমিকা রেখেছে বলে জানা গেছে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসফ) এর আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন।

এদিকে, সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য রক্ষা ও কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমের কারণে প্রতি বছর ৫ মাসের অধিক সময় সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণের পাস বন্ধ থাকে। এতে করে সফটসেল কাঁকড়া চাষের প্রধান কাঁচামাল হার্ডসেল কাঁকড়া বা ক্রাবলেটের স্বল্পতার দেখা দিচ্ছে। ফলে অনেক বেশি মূল্যে এই ক্রাবলেট ক্রয় করতে হয় চাষিদের। তার উপর বৈশ্বিক মন্দা আর উৎপাদন খরচ অনুযায়ী মূল্য না পাওয়ায় বিপাকে কাঁকড়া চাষিরা। তারা বলছে সম্ভাবনাময় এই সফটসেল কাঁকড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সুন্দর বনের উপর নির্ভশীলতা কমিয়ে বিকল্প উপায়ে স্বল্প মূল্যে কাঁকড়ার পোনা সরবরাহের পাশাপাশি চাষিদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের দাতিনাখালী গ্রামের কাকড়া চাষি মো. হাসেম আলী বলেন, একেবারে সুন্দরবনের গাঁ ঘেষে আমাদের বসতি হওয়ায় বাপ দাদার একমাত্র পেশা ছিল সুন্দরবনে মাছ, মধু এবং কাঠ আহরণ। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও বাপ দাদারা ইচ্ছামত বনে যেতে পারত। কিন্তু এখন আর ইচ্ছামত বনে যাওয়ার সুযোগ নেই। বছরের অধিকাংশ সময়ই বনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকে যে কারণে পরিবার নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত ছিলাম। নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নরম খোলসের চাষ করে এখন আর্থিকভাবে সচ্ছলতার মুখ দেখেছি। আমার স্ত্রী ও সন্তানরাও এ কাজে সহযোগিতা করেন। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজার মন্দা থাকায় এবছর মালের দাম কম রয়েছে।

পশ্চিম পোড়া কাটলা গ্রামের আবুল বাসার বলেন, তিনি দেড় বিঘা জমিতে নরম খোলসের প্রজেক্ট করেছেন। মাত্র কয়েক বছরে আশার আলো দেখেছেন। সারা বছরই এই প্রজেক্টে কাজ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী তিনি।

একই কথা জানান নরম খোলসের কাকড়া চাষি আশরাফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই। এবছর তারা লাভের মুখ দেখতে পারবেন কি না সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে।

কাকড়া রপ্তানি কোম্পানি জার্মান বাংলার প্রতিনিধি নেপাল কুমার মন্ডল বলেন, চাষিরা কাকড়া নিয়ে আমাদের কাছে আসলে কাকড়াগুলো প্রথমে গ্রেডিং করা হয়। যেমন গ্রেড এ-১, এ-২, এ-৩, এ-৪ এবং বি ও সি। গ্রেডিং করার পর গ্রেড অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে তারপর কোম্পানিতে পাঠিয়ে দেই। কোম্পানি সেগুলো প্রোসেসিং করে বিদেশ রপ্তানি করেন।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার উপকূলে বেসরকারিভাবে দুইটি ও কক্সবাজারে সরকারিভাবে একটি কাঁকড়া হ্যাচারি স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সফটসেল কাঁকড়া চাষে পোনার যে সমস্যা ক্রাবলেটের তা সমাধান হবে বলে।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :