মামুনুল হকের নারীকাণ্ড: সেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সতর্ক করল সরকার

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৩, ১৬:৩৮ | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩, ১৬:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে  হেফাজত ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এক নারীসহ আটকের সময় বিশৃঙ্খলার ঘটনায় জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বে থাকা টি.এম. মোশাররফ হোসেনকে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ‘অদক্ষতা’ ও ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে ভবিষ্যতে সরকারি দায়িত্ব পালনে আরও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাকে। ৪ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত থাকা খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টি.এম. মোশাররফ হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মকালে হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক তার কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাসহ সোনারগাঁও থানাধীন রয়েল রিসোর্টে উঠায় এলাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মাওলানা মামুনুল হক তার কথিত স্ত্রী ঝর্ণাসহ ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল বেলা অনুমানিক সাড়ে ৩টার সময় সোনারগাঁও থানাধীন রয়েল রিসোর্টে ৫০১ নং রুম ভাড়া নিয়ে উঠেন। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রিসোর্টের কর্মচারীর মাধ্যমে স্থানীয় নেতাদের তথ্য দেওয়ার প্রেক্ষিতে স্থানীয় ছাত্রলীগ/যুবলীগ নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা মামুনুল হক ও তার কথিত স্ত্রীর অবস্থান করা ৫০১ নাম্বার রুমে প্রবেশ করে ফেসবুকে লাইভ করা শুরু করেন। অনুমানিক সাড়ে ৪টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন টি.এম. মোশাররফ হোসেন এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশনা মোতাবেক মামনুল হককে বুঝিয়ে থানায় নিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু করেন।

কিন্তু হেফাজতের নেতাকর্মীরা ততক্ষণে রয়েল রিসোর্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় মামুনুল হককে থানায় নেওয়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে এতে বলা হয়, পরবর্তীতে হেফাজত নেতা-কর্মীরা ভাঙচুর শুরু করলে তিনি তাদের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং জান্নাত আরা ঝর্ণাকে হেফাজত কর্মীদের হাতে বুঝিয়ে দেন। এ ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া সোনারগাঁ থানায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন এবং জান্নাত আরা ঝর্ণাকে হেফাজত কর্মীদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় নারী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যেতে বলেন, যা তাদের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। 

এরপর ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয় বলেও এতে জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ প্রেক্ষিতে টি.এম. মোশাররফ কারণ দর্শানোর জবাব দিয়ে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন এবং তার ব্যক্তিগত শুনানিও গ্রহণ করা হয়। কারণ দর্শানোর জবাব, ব্যক্তিগত শুনানিতে পক্ষদের দেওয়া বক্তব্য এবং প্রাসঙ্গিক সকল তথ্যাদি বিবেচনা করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড আরোপের সম্ভাবনা থাকায় অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে এ বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তার দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে টি.এম. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত 'অদক্ষতা' ও 'অসদাচরণ' এর অভিযোগ তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত হয়নি বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এতে আরও বলা হয়, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, অভিযোগ সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক দলিল পত্রাদি, তদন্ত প্রতিবেদন এবং সার্বিক পর্যালোচনা করে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে ভবিষ্যতে সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

২০২১ সালের ৫ এপ্রিল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেনকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই তিনি নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন।

(ঢাকাটাইমস/০৫জুন/এসএস/ইএস)