‘যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ভিত্তিহীন’ সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক কাফী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হেল কাফীর বিরুদ্ধে আনীত যৌন নীপিড়নের অভিযোগকে 'মিথ্যা ও ভিত্তিহীণ বললেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে শিক্ষকরা।
সোমবার বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক কাফী'র বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেন আয়োজকরা।
এর আগে অধ্যাপক কাফী'র বিরুদ্ধে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘জাবি প্রো-ভিসি’র দৌড়ে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক’ ও একটি অনলাইন পোর্টালে ‘জাবির প্রো-ভিসি পদে নিয়োগের আলোচনা ছেয়ে গেছে সমালোচনায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ঐ সংবাদে ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন এক নারী শিক্ষিকাকে যৌন নিপীড়ন, ১৯৯৬ সালে ইতিহাস বিভাগের এমফিল পর্যায়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় সাভারের একজন প্রকৌশলীর স্ত্রীকে যৌন হয়রানি, ২০০০ সালের ২৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যৌন নিপীড়ন, ডাকাতি, সন্ত্রাসের অভিযোগে এলাকাবাসীর পক্ষে তার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির মামলা দায়েরের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
অধ্যাপক কাফী বলেন, "আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। আমাকে হেয় করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এসব অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নব্য আওয়ামী লীগার কয়েকজন আমাকে দমিয়ে রাখতে এসব মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।"
"প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক (তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক) সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৯৬ সালের ১৮ এপ্রিল তারিখে উপাচার্য বরাবর অধ্যাপক কাফীর বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইল করার অপচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। সাভারে এক প্রকৌশলীর স্ত্রীকে নিপীড়নের পর অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এতে তিনি সাক্ষী হিসেবে জাকসুর তৎকালীন জিএস আজগর হোসেন ও সদস্য আতাউর রহমানকে সুপারিশ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা দুজন লিখিতভাবে জানান এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।"
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালের ৮ জুন আতাউর রহমান এবং একই বছরের ৫ অক্টোবর আজগর হোসেন প্রক্টর বরাবর লিখিতভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। উভয়ে তাদের বক্তব্যে অধ্যাপক কাফী'র বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেন।
নিজ এলাকা টাঙ্গাইলে ডাকাতি ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগকে মিথ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেই অভিযোগ আনা হয়েছিল তা পরবর্তীতে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। এলাকার নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিলাম আমি। তৎকালীন চিফ জাস্টিস ও রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদও এই ব্যাপারে রায় দিয়েছিলেন যে, আনীত অভিযোগ মিথ্যা। তদন্ত কমিটিও বিন্দুমাত্র সত্যতা পায়নি এসব অভিযোগের।"
নিজ বিভাগের শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির ব্যাপারে অধ্যাপক কাফী বলেন, "আমার বিরুদ্ধে নিপীড়নের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে অভিযোগপত্র ও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কোনোটিই দেখানো হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয় করার জন্য একটি মহল এই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।"
তিনি আরও বলেন, ‘প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির পর স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করতে হয়। কিন্তু তা করা হয়নি। অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক আমাকে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষক নিয়োগে অযোগ্যতার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমাকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। অ্যাডহক নিয়োগে বিভাগীয় চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। তখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলাউদ্দিন স্যার যাচাই-বাছাই করে আমাকে নিয়োগ দেন।"
সংবাদ সম্মেলনে অন্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. মো. খালিদ কুদ্দুস, সহযোগী অধ্যাপক ড. আলী আকবর, সহযোগী অধ্যাপক রনি বসাক, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মীর ফেরদৌস হোসেন, অধ্যাপক ড.মো. লুৎফুল এলাহী প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/৫জুন/এআর)