সড়ক নির্মাণের নামে ভেকু দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে ৯২টি তালগাছ ও ৫১টি খেজুরগাছ

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৩, ২৩:৩৩

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় গ্রামীণ সড়কের কাজ করতে গিয়ে ৯২টি তালগাছ ও ৫১টি খেজুরগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের যৌতা গ্রামে এই তালগাছ ও খেজুরগাছ গুলো দুই দিনে এক্সকাভেটর  (ভেকু মেশিন) দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশ সংগঠকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি অবাক হয়েছেন উপজেলা বনসংরক্ষন কর্মকর্তা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলার বাউফল সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান লিটু মোল্লা সড়কের কাজ করতে গিয়ে এই গাছগুলো গাছগুলো উপড়ে ফেলেছেন।  

সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সাংসদের বিশেষ বরাদ্ধ থেকে লিটু মোল্লাকে ১৪ মেট্রিকটন গম বরাদ্ধ দেওয়া হয়। যার সরকারী মূল্য ৫লাখ ৮৮হাজার টাকা। সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের যৌতা গ্রামের আনছার বিশ্বাসের বাড়ি থেকে ইসমাইল ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত ২ হাজার ৫শ ফুট (প্রায় ১ কিলোমিটার) সড়ক নির্মাণের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় এই কাজ।

নিয়মানুযায়ী শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও কামরুজ্জামান লিটু মোল্লা ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলছেন। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটতে গিয়ে সড়কের দুই পাশের ছোটবড় প্রায় দেড় শতাধিক তাল গাছ ও খেজুর গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। 

সোমবার (৫ জুন) সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় আনছার বিশ্বাসের বাড়ির পাকা সড়কের সামনে থেকে ইসমাইল ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত মাটির সড়কটি গত শুক্র ও শনিবার (২ ও ৩ জুন) ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। সড়কের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে দুই পাশের ৯২টি ছোটবড় তালগাছ ও ৫১ টি খেজুরগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো সড়কের পাশে  এখানে সেখানে পরে আছে। উপড়ে ফেলা প্রায় গাছ গুলোতেই তাল ও খেজুর ফল দেখা গেছে। স্থানীয় শিশু ও কিশোরা তালগাছ থেকে তালের শাষ কেটে খাচ্ছেন। 

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটা হলে গাছগুলো উপড়ে ফেলা লাগতো না। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটায় গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে।

পরিবেশ বান্ধব গাছ গুলো উপড়ে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিবশেবাদী সংগঠন সেইভ দি বার্ড অ্যান্ড বি এর পরিচালক এম এ বাশার বলেন, সরকার যেখানে পরিবেশ রক্ষায় ও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছ রোপণ করার জন্য প্রচারোণা চালায়, সেখানে একজন দায়িত্বশীল লোক কি করে নির্বিচারে এই গাছ গুলো হত্যা করলো। তার আমার ধারনার বাইরে।

গাছ কাটার বিষয়ে সত্যতা স্বিকার করে প্রকল্প বাস্তয়ন কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান লিটু মোল্লা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সড়কের মধ্যে বেশ কিছু তালগাছ ও খেজুর গাছ পড়ায় এমনটি হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাস বলেন, আমার জানামতে সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুজ্জামান লিটু মোল্লা কাজটি করেছেন। রাস্তাটি স্থানীয় এমপি মহোদয়ের বিশেষ বরাদ্ধ থেকে করা হয়েছে। তাকে সড়ক নির্মাণ করতে বলা হয়েছে, গাছ কাটতে বলা হয়নি।’

উপজেলা বন কর্মকতা বদিউজ্জামিান সোহাগ বলেন,‘ তাল গাছ ও খেজুর গাছ কাটার কোনো বিধান নেই। একান্ত প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কাটতে হবে। আমার জানামতে এখানে গাছ কাটার কোন অনুমোদন নাই।’

বাউফল উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বায়েজেদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৫জুন/এআর)