সাভারের রাজ্জাক প্লাজায় জাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আহত ৮

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৩, ১০:১০ | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩, ১০:৩২

জাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর মোবাইল দোকানিদের সংঘবদ্ধ হামলায় ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুজনকে এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মোবাইল সারানোকে কেন্দ্র করে সাভারের রাজ্জাক প্লাজা মার্কেটে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র। তার মাথায় দশটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া উক্ত বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ, এহসানুর রহমান রাফি, মুইন, আতাউর রহমান, উক্ত বিভাগের ৫০ ব্যাচের শোয়েব ইমরান, বাংলা বিভাগের ৫১ ব্যাচের জুবায়ের আহমেদ, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের বিজয়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, গত রবিবার (১১ জুন) পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী রাজ্জাক প্লাজার সিয়াম টেলিকমে মোবাইলের স্ক্রিন প্রটেক্টর লাগাতে নিয়ে যায়। হুয়াওয়ে পি ৩০ প্রো মোবাইলটির বাজারমূল্য প্রায় ৯০ হাজার টাকা। দোকানি মোবাইলটি ওই ছাত্রীর অগোচরে অন্য দোকান থেকে প্রটেক্টর লাগিয়ে এনে দেয়। দুইদিন পর ওই ছাত্রী বুঝতে পারেন, তার ক্যামেরাটি ঘোলা দেখাচ্ছে এবং ফোনের পেছনের ব্যাকশেলটি আলগা হয়ে গেছে। এতে তার মোবাইলের পার্টস খুলে রেখে দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ হয়। পরে মঙ্গলবার বিকালে তার বন্ধুদের নিয়ে দোকানদারদের সাথে কথা বলতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। স্ক্রিন প্রটেক্টর লাগাতে ফোনের ব্যাকশেল খুলতে হয় কিনা? এসব প্রশ্ন করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা৷ এক পর্যায়ে কয়েকটি দোকানের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে। এর কিছুক্ষণ পর আবার শিক্ষার্থীরা কয়েকজন সিনিয়রকে সাথে নিয়ে দোকানিদের সাথে কথা বলতে গেলে, দোকানের মেইনগেটে তালা দিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়৷

আহত শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, দোকান মালিক এবং কর্মচারীরা রড, গরম তাতাল, ফায়ার এস্টিংগুইশার এবং দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে। কেউ কেউ হেলমেট পরে তাদের ওপর হামলা করে। এছাড়া আগুন নিভানোর যন্ত্র স্প্রে করে ধোঁয়া তৈরি করে তাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করা হয়।

রডসহ হেলমেট পরে আক্রমণের একটি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। 

অতর্কিত আক্রমণের ফলে ৫১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায়, এবং অপর এক শিক্ষার্থীর পিঠে উত্তপ্ত তাতাল দিয়ে আঘাত করা হয় বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আহত শিক্ষার্থীদের প্রথমে সাভার সুপার মেডিকেলে ও পরবর্তীতে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। 

মারধরের ঘটনা জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা রাজ্জাক প্লাজায় চলে আসে এসময় মার্কেটের মূল ফটক আটকিয়ে দেয় মালিকপক্ষ। ফলে ভেতরে আটকা পড়ে যায় কিছু শিক্ষার্থী। সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাভার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

এক পর্যায়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে রাজ্জাক প্লাজা দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির অফিস কক্ষে পুলিশের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসে ব্যবসায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দুই ঘণ্টার অধিক সময় ধরে আলোচনা চলে। এসময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক রুমানা রইছ, সাভার থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা, রাজ্জাক প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির হিমু, জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

রাজ্জাক প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির হিমু দোকানিদের ভুল স্বীকার করেন। তিনি নতুন আরেকটি হুয়াওয়ে পি ৩০ প্রো ফোন, হামলায় অন্যান্য যাদের মোবাইল ফোন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহনের অঙ্গীকার করেন। সেইসাথে, যে কর্মচারীরা এই হামলার সাথে জড়িত, সকলকে রাজ্জাক প্লাজা থেকে চাকরিচ্যুত করার কথা জানান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের এই নেগোসিয়েশন মেনে নেয়নি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। এখন ব্যবসায়ীরা তাদের ভুল স্বীকার করেছেন। তারা শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে চাচ্ছেন। তবে আহত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে, তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আলোচনা শেষে উপস্থিত সকলে এনাম মেডিকেলে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান। গুরুতর আহত শিক্ষার্থীর বিষয়ে এনাম মেডিকেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মিঠুন বলেন, ভিক্টিমের মাথায় চোট লেগেছে, রক্তক্ষরণ হয়েছে তবে সিটি স্ক্যান করে কোনো ইন্টার্নাল ড্যামেজ পাওয়া যায়নি, ওষুধের মাধ্যমেই ঠিক হয়ে যাবে আশা করছি।

রাজ্জাক প্লাজা দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির হিমু বলেন, শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবো। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যেসব ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) নয়ন কারকুন জানান, মার্কেটে উত্তেজনার খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে দ্রুত চলে আসি এবং ছাত্রদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি। আমরা উভয় পক্ষের সমঝোতার চেষ্টা করছি এবং এ ব্যাপারে জাবি প্রশাসনে খুবই সাহায্য করেছে। এ ব্যাপারে কেউ যদি আইনগত সহায়তা নিতে চায় তাহলে আমরা প্রস্তুত আছি এবং কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা গ্রহণ করব।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/এসএ)