চোরাই গাড়ির রঙ-নিবন্ধন পরিবর্তন করে বিক্রি, অবশেষে গ্রেপ্তার ৪

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৩, ১৬:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

আন্তঃজেলা গাড়ি চোর চক্রের সক্রিয় সদস্যরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পিকআপ চুরি করে আসছে এবং পরে গাড়ির রঙ ও নিবন্ধন নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করে। এই গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের কাজ করে আসছিল। বৃহস্পতিবার র‌্যাব-১ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক মোস্তাক আহমেদ।

 

এর আগে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে আন্তঃজেলা পিকআপ চোর চক্রের চারজন সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-১। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে তিনটি চোরাইকৃত পিকআপ উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন- বিল্লাল হোসেন, কবির হোসেন, মো. আশিক ও  রাজ। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে তিনটি  চোরাইকৃত পিকআপ, চারটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭৫০টাকা উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি চুরি চক্রের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গাড়ি চোর দলের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে কটু কৌশলে বোকা বানিয়ে এমনকি অনেক সময় আক্রমন করে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, পিকআপ, ট্রাক, মোটর সাইকেল, গাড়ি, টাকা পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি চুরি,ডাকাতি করে জন জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। তাদের চুরি,ডাকাতির ভয়ে এলাকার লোকজন সর্বদা আতঙ্কে থাকে।

র‌্যাব জানায়, র‌্যাব-১ দীর্ঘ দিন ধরে চোর চক্রকে গ্রেপ্তারের জন্য  র‌্যাবের সব ধরনের গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।  গত মঙ্গলবার  রাতে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাড্ডা থানার মেরুল বাড্ডা ডিআইটি রোড প্রজেক্ট, চার নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর প্লটের মীম অটোমোবাইলস গ্যারেজে অভিযান চালায়। অভিযানে  বিল্লাল হোসেন, কবির হোসেন, মো. আশিক ও  রাজ নামের  পিকআপ চোর চক্রের  চারজন সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে তিনটি  চোরাইকৃত পিকআপ, চারটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭৫০টাকা উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, বিল্লাল হোসেন এই চুরি চক্রের অন্যতম মূলহোতা। তার নেতৃত্বে অন্যান্য সহযোগীরা গাড়ি চুরি করে আটক কবির হোসেনের ব্যক্তিগত মীম অটোমোবাইলস গ্যারেজে নিয়ে আসে। তারপর পলাতক  মো. আব্দুল করিম এসব চুরিকৃত গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে একাধিক গাড়িতে সংযোজন করে। এছাড়াও এক গাড়ির চেসিস নম্বর অন্য গাড়িতে সংযোজন করে বিক্রি করে।

র‌্যাব জানায়, এসব গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অন্যত্র বিক্রি করে তারা। আর এই চোরাই গাড়িগুলো দিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় তাদের অপরাধ কার্যক্রম ব্যবহার করে থাকে। যেন আইন শৃংখলা বাহিনী তাদের আটক করলেও কোন প্রকার সঠিক তথ্য উৎঘাটন করতে না পারে। তারা পরস্পর যোগসাজশে বা নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে সারাদেশ থেকে গাড়ি চুরি করে ঢাকা এনে বিক্রি করে।

তাদের মধ্যে আটক মো. আশিক এবং রাজ গাড়ি চুরি ছাড়াও এক জেলার চুরিকৃত গাড়ি অন্য জেলায় গাড়ি বিক্রির কার্যক্রম করে থাকে। এই চোর চক্রের সদস্যরা একেক জন্য এক এক দায়িত্ব নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যা প্রাথমিকভাবে তারা স্বীকার করেছে। তারা প্রায় ছয় থেকে সাত বছর ধরে এই কাজ করে আসছে। তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গাড়ি চুরি করে বিক্রয় করেছে।  এদের মধ্যে  বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে মাদক, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। এই চক্রটি চোরাইকৃত গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও চেসিস পরিবর্তন করে বিভিন্ন মাদক কারবারীদের কাছে অল্প মূল্যে বিক্রি করে। এ চক্রের পলাতক অন্যান্য জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।

আটককৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাবের কর্মকর্তা বলেন, তারা আন্তঃজেলা পিকআপ চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে পরস্পর যোগসাজশে চোরাই ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয় বিক্রয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পিকআপ চুরি করে গাড়ির রং ও নিবন্ধন নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করে আসছে। আটক এই গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। তাদের  বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আটক বিল্লাল হোসেন ফেনী জেলার ফুলগাজী থানার মৃত সানাউল্লাহ ভূইয়ার ছেলে, কবির হোসেন পটুয়াখালী জেলার সদর থানার মৃত কলম মাতবরের ছেলে, মো. আশিক ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার আবুল কাশেমের ছেলে এবং রাজ মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার জামাল উদ্দিনের ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুন/এএ/কেএম)