তারুণ্যের সমাবেশে গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যরা যা বললেন

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০২৩, ২০:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের উদ্যাগ্যে তারুণ্যের সমাবেশে গুম-খুনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নয়জনের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।

এর মধ্যে গুম হওয়া রাজধানীর পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলমের স্ত্রী লুনা আলম বলেন, এক দুর্বিষহ জীবন পার করছেন তার পুরো পরিবার। তিনি এখনো জানেন না তার স্বামী কোথায় আছেন। অথচ, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সীর লোকজন এসে তাকে বলে- ‘তার স্বামী বিদেশে চলে গেছেন।’ আমার স্বামীর পাসপোর্ট দেখিয়ে তাদেরকে বলি- সে কিভাবে বিদেশে গেলেন ? আমার স্বামীর সঙ্গে যারা গুম হয়েছেন তাদের সবাইকে এই সরকারকে ফেরত দিতে হবে।

 

মুন্সীগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা শাওনের বাবা সোয়েব আলী বলেন, তার ছেলেকে গুলি করে মারা হয়েছে। এর বিচার চাই। শুধু তার ছেলে নয়, যতজনকে গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে তার সবকটির বিচার হতেই হবে। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, এটা কতো ভারী আর কষ্টের তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন, তার ছেলের মৃত্যুর পরও তিনি মিছিল-মিটিংয়ে আসেন, আর ভাবেন- এখানেই তার সন্তান আছে। এই লাখো তরুণ-যুবকরাই তার সন্তান হয়ে ফিরে এসেছেন। তাদের মধ্যেই সন্তানকে খুজে পাই। এই দলের জন্য এবং দেশের জন্য যদি আরো তিন ছেলেকে জীবন দিতে হয় তাতেও রাজি আছি। বিএনপি করতে গিয়ে যদি তারও জীবন দিতে হয়, তাতেও তিনি প্রস্তুত আছেন।

 

গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা সাজেদুল ইসলাম সমুনের বোন সানজিদা আক্তান তুলি বলেন, প্রতিটা গুম ও খুনের বিচার করা হোক। গুম পরিবার নিয়ে তারা আন্দোলন করছেন। এই আন্দোলনে সবাইকে শরীক হতে হবে, সাহস জোগাতে হবে। তাদের এই আন্দোলন চলবে। আর কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিচারবিভাগ, আইনবিভাগ এবং প্রশাসনের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

 

পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনির বাবা ইয়াকুব আলী বলেন, প্রশাসন বাহিনীকে বলছি, একটা লোককে গুলি করে মারার জন্য কয়টা গুলি দরকার। ১৭টি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তার কলিজার টুকরা ছেলেকে। সন্তান হারিয়েও নিস্তার নেই তাদের। প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্যাতন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের গুন্ডাদের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এরকমভাবে আরো বাবা’কে সন্তান হারিয়ে কাঁদতে হবে।

 

বিসিএস পরীক্ষায় সকল ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও চাকুরী না হওয়া রকিবুল হাসান খান বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে পুলিশী তদন্তে তার চাকুরী হয়নি। এখন তিনি বেকার। উদ্বাস্তুর মতো জীবন-যাপন করছেন।

 

ভোটাধিকার বঞ্চিত আইনজীবী খন্দকার আসমা হামিদ বলেন, তিনি নতুন প্রজন্মের ভোটার হয়েও বিগত দু’টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। তার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় প্রথমবার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, আর ২০১৮ সালে মা’কে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গেলে বলা হলো- ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগে দেশে উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হতো। আর এখন পুরো নির্বাচনকে ঘিরে এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরী করে আওয়ামী লীগ। তাদের হাতে গণতন্ত্র আর ভোটের সাংবিধানিক অধিকার নিরাপদ নয়।

 

পত্রিকায় কলাম লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকুরিচ্যুত হওয়া অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান আবেগতাড়িত কণ্ঠে নিজের বঞ্চনার কথা তুলে ধরে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ১০০ বছরের ইতিহাসে ভিন্ন মত কিংবা বাক স্বাধীনতার কারণে কাউকে চাকুরিচ্যুত করা হয়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে শুধু চাকুরিচ্যুত করা হয়নি, তার স্ত্রী ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও একদিনের নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

 

গুম থেকে ফেরত আসা দৈনিক পত্রিকার আলোচিত ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, গুম ও নির্যাতনের কথা মনে পড়লে তার ঘুম হয় না। ভাগ্য তার অনেক ভালো। গুম থেকে ফেরত আসতে পেরেছিলেন। সেইদিনগুলোর ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫৩দিন তাকে চোখ বেধে আর পিছনে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছিলেন। গলায় পাড়া দিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিলো। এই সরকার ভয়াবহ ফ্যাসীবাদ আর দানব সরকার। এই সরকারকে সরাতে সবার নিয়ত পরিস্কার করতে হবে। যাদের গুম করেছেন তাদের ফেরত দিন। এই সরকার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/জেবি)