মেঘনার ভাঙনের শিকার ২ শতাধিক পরিবার সর্বস্বান্ত

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:১৬ | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৬

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

চাঁদপুর নৌ-সীমানার শহরের পশ্চিমে জেলা সদর থেকে ২০ কি.মি. পশ্চিমে পদ্মা-মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন বছর জুড়ে অব্যাহত থাকে। তবে বর্ষা আসলে ভাঙন আতঙ্ক আরো বেড়ে যায় চরাঞ্চলের হাজার হাজার বসবাস করা বাসিন্দাদের। বর্তমানে সদরের ইব্রাহীমপুর ও শরীয়তপুর জেলার চরছেনসাস এলাকায় ভাঙন অনেকগুন বেড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে স্থানীয়দের আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে।

গত কয়েকদিনের ভয়াবহ ভাঙনের ফলে চাঁদপুর-শরীয়তপুর জেলা সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত ইব্রাহীমপুর ও শরীয়তপুর জেলার চরছেনসাস এলাকার প্রায় ২শতাধিক পরিবার বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে অনেকেই ছিন্নমূল হয়ে খোলা আকাশের নীচে দিনরাত অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর পশ্চিমে চাঁদপুর-শরীয়তপুর জেলা সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হচ্ছে ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের একাংশ আলু বাজার ফেরিঘাট। ঘাটের একাংশ রয়েছে ইউনিয়নে। এই স্থানটির প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও শত শত বসতি গত কয়েকমাস ধরে মেঘনা গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন দেখা দেয়। বর্ষার পানি কমা শুরু করলে ভাঙন আরো তীব্রতা বেড়ে ভয়াবহতায় রুপ নেয়।

ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অস্থায়ীভাবে স্থানীয়রা নিজেদের বসতভিটা রক্ষা করার চেষ্টা করলে তা হচ্ছে না। তারা বাঁশ দিয়ে বাঁধ তৈরি করে সম্পত্তি রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পানির স্রোত আর ঢেউ এর সঙ্গে তা ঠেকানো সম্ভব হয়ে উঠছে না।

ইব্রাহীমপুরের বাসিন্দা আবদুল্লাহ ও সোলায়মান জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এলাকার প্রায় ২ শতাধিক বাড়ী ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁশ দিয়ে বাঁধ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করলেও ভাঙন প্রতিরোধ হচ্ছে না। এখান থেকে অন্যত্র গিয়ে বাড়ি তৈরি করার সামর্থও নেই তাদের। যে কারণে ভাঙনের মুখে তারা অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছেন। আতঙ্কের মধ্যেই তাদের প্রতিটি রাত কাটাতে হয়। সরকারের কাছে দাবি একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে তাদের বসতভিটা রক্ষায় যেন এগিয়ে আসে।

চরছেনসাস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার বালা জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বসতী নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকারকে এই ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। কারণ আমাদের সামর্থ নেই এই ভাঙন প্রতিরোধ করা। সরকার এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠবে।

ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম খান জানান, ভাঙন এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন। কয়েকবার বালু ভর্তি অস্থায়ীভাবে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ দিয়ে ভাঙন এলাকায় প্রতিরোধের চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু বর্ষা এলে এবং পানি কমলে ভাঙন বাড়তে থাকে। স্থায়ী বাঁধ দিয়ে এলাকা রক্ষা করা খুবই জরুরি। সরকারের কাছে দাবি এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা নাহলে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটির ডিজাইন ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। এই অর্থ বছরের শুরুতে আমরা এটি দাখিল করব। পাশাপাশি যেখানে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে পরিদর্শন করেন খুব দ্রুত সময়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপাতত সেখানে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভাঙন এলাকায় ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৬ আগস্ট/ ইএইচ)