কেন্দুয়ায় পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত কৃষকরা

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১৩:০৫ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১৩:০৬

আশরাফ গোলাপ, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)

বাংলাদেশ সোনালী আশেঁর দেশ। এক সময় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল এই পাট। পাটের দাম কমে যাওয়াতে কৃষকদের পাট চাষে অনীহা এসেছে। এখন পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবার পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষকরা।
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় সোনালী আঁশ পাটের আঁশ ছাড়াতে ও রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কেন্দুয়ার কৃষকরা।
প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে গ্রাম অঞ্চলে পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত থাকে কৃষকরা। পাট গাছ দীর্ঘদিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে তা পঁচে যাওয়ার পর পাট থেকে আঁশ সংগ্রহ করে কৃষকরা।

গত কয়েকদিনে কেন্দুয়ার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ মিলে রাস্তার পাশে বসে কিংবা বাড়ির উঠোনে বসে গাছ পাট থেকে আঁশ সংগ্রহ করে ধোয়ার পর রোদে শুকাছে।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন বর্ষার পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে ওঠে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে সোনালী আঁশ ঘরে তুলতে বেড়ে যায় কৃষক-কৃষাণীর ব্যস্ততা। প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমে কেন্দুয়ায় নতুন পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা। এখন চলছে পাটের আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডোবা ও বিলের পানির মধ্যে জাগ (পঁচাতে) দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন কৃষক। শুধু কৃষক নয় এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা থাকায় কৃষকদের সঙ্গে প্রতিবেশিরাও আঁশ ছাড়িয়ে দিয়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করছেন। 

ইতোমধ্যে বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। দামও ভাল। উপজেলার চিরাং ও রোয়াইলবাড়ি হাটে বিভিন্ন জাতের পাট বেচা-কেনা হচ্ছে। তোষা জাতের পাট ২ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা আর মেচতা জাতের পাট ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ন্যায্য মূল্য পেয়ে পাট চাষিদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

কৃষক আজহারুল মিয়া জানান, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা। ফলন ভাল হলে এক বিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৮ মণ পাট পাওয়া যায়। দাম বেশি হলে লাভ ও বেশি হয়।

পূর্বরায়ের সোনালী আঁশ ছাড়ানো শ্রমিক জিলু মিয়া জানান, তিনি প্রতি লাছা ২০ (বিশ) টাকা থেকে ২৫ (পচিশ) টাকা করে দিনে ১০ থেকে ১৫ লাছা পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। এতে তার দিনে দুইশত থেকে তিনশত টাকা আঁশ ছাড়ানো কাজে রোজগার হয়।

উপজেলার ১২নংরোয়াইলবাড়ি
ইউপির রাজনগর গ্রামের কৃষক হলুদ মিয়া ও নীলাম্বরখিলা গ্রামের লিটন মিয়া বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়েছে তাদের। তবে বৃষ্টির অভাবে পাট জাগ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এবার তারা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন বাজারে পাটের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আগামী বছর আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবেন তারা মনে করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর পাটের আবাদও হয়েছে ৫৮০ হেক্টর জমিতে। আর প্রনোদনা হিসাবে ১০০ জন  কৃষকের মধ্যে প্রতিজনকে ২ কেজি করে পাট বীজ ও ১০ কেজি করে এমওপি ও ডিএপি সার বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া পাট মন্ত্রণালয় উপজেলায় ২৫০ জন কৃষকের মধ্যে প্রত্যেককে ২ কেজি করে পাট বীজ সহায়তা করেছে। 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, এ উপজেলায় সোনালী আঁশ পাটের চাহিদা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তোষা জাতের পাটের আবাদই বেশি করেন এ এলাকার কৃষকরা। এলাকার কৃষকরা যাতে সকল জাতের পাট আবাদে আগ্রহী হয় ও যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারে এবং স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল পাট উৎপাদন করতে পারে এ জন্য প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে পরামর্শ প্রদান করেছেন। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে পাটকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এসএ)