মুহূর্তেই মোবাইলফোনের ‘আইএমইআই’ বদল! ফাঁসতে পারে যে কেউ! চক্রের সাত জন ধরা

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১৪:৩২ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১৭:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

চুরি বা ছিনতাইয়ের মোবাইলফোনের স্বতন্ত্র নম্বর বা আইএমইআই মুহূর্তেই বদলে দিত তারা। আসল আইএমইআইয়ের স্থলে বসাতো অন্য নম্বর। ফলে এসব মোবাইলফোন খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। মোবাইলফোনের আইএমইআই পরিবর্তনকারী এমন একটি চক্রের সাত সদস্যকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবি বলছে, চক্রটি ১৩ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে এমন আইএমইআই নম্বর বসাতো যা অন্যান্য মোবাইলের আইএমইআই নম্বরের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এসব ফোন দিয়ে কেউ অপরাধ করলে নিরপরাধ মানুষ ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এমন বেশকিছু ঘটনা ডিবি পুলিশের নজরে এসেছে। আবার চুরি বা ছিনতাই হওয়া ফোন উদ্ধারও কঠিন হয়ে পড়ে।

সূত্র বলছে, একই আইএমইআই নম্বর তিনটির বেশি ফোনে পাওয়া গেছে। একটি অপরাধের সূত্র ধরে এসব মোবাইল ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখা গেছে, তারা এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। এতে প্রকৃত অপরাধী শনাক্তেও বেগ পেতে হচ্ছে।

আইএমইআই পরিবর্তনকারী চক্রটির সাত সদস্যকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান হারুন-অর রশীদ। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ভুক্তভোগী তিনজনের হাতে উদ্ধার হওয়া মোবাইলফোন তুলে দেন ডিবিপ্রধান।

অভিযুক্তরা হলেন—সাইদুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, সোহেল রানা, রানা শেখ, বেলাল হোসেন রাসেল, আমির হোসেন ও মো. রবিন।

তাদের কাছ থেকে একটি মাইক্রোস্কোপি, একটি কম্পিউটার, দুটি ল্যাপটপ, ১৯টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, একটি মোবাইলের আনলক করার সফটওয়্যার ডিভাইস, একটি আইএমইআই পরিবর্তনের সফটওয়্যার ডিভাইস, চারটি ডাটা ক্যাবল, একটি পাওয়ার মেশিন, একটি হিটার মেশিন ও একটি রাউটার উদ্ধার করা হয়।

তারা ডিবিকে জানিয়েছে, তারা মোবাইলফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করত। চুরি করা মোবাইলফোন যেন পুলিশ উদ্ধার করতে না পারে সেজন্যই তারা এই কাজ করত।

ডিবিপ্রধান হারুন-অর রশীদ বলেন, ‘রাস্তার মোড়ে ছিনতাইকারীরা ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা টান দিয়ে মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। আগে তারা ছিনতাই করা মোবাইলটা অনেক দিন বাসায় ফেলে রাখত। অথবা বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিত। এবার আমরা একটা চক্রের সন্ধান পেলাম, যারা আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করতে পারে।’

‘চক্রটি মোবাইলফোন চুরি করে সঙ্গে সঙ্গেই আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে। কারণ আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন না করলে আমরা খুব সহজেই মোবাইল খুঁজে পাই। এ কারণে তারা এখন নতুন প্রযুক্তি মাইক্রোস্কোপি, একটি সিপিইউ, দুটি ল্যাপটপ, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে একটি ল্যাব বানিয়েছে। ওই ল্যাবে নিয়ে তারা মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়। তারা গ্যারান্টি দেয় যে এটা চোরাই মোবাইল হলেও কেউ ধরতে পারবে না।’

ডিবি পুলিশ বলছে, আইএমইআই পরিবর্তন করতে চক্রটি একটি ল্যাব গড়ে তুলেছিল। অবৈধভাবে আমদানি করেছে কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা একটি মোবাইলফোনের আইএমইআইটি বদলে ফেলছে। পরে বিক্রি করছে বাজারে।

এ ধরনের মোবাইল ব্যবহার করে ফায়দা নিতে পারে অপরাধীরা জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান বলেন, ‘কারও মোবাইল চুরি কিংবা হারিয়ে গেলে জিডির পর গোয়েন্দা বিভাগে এসে অভিযোগ জানাতে হবে।’

চুরি কিংবা ছিনতাই হওয়া মোবাইলফোন কেনাবেচা থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দেন ডিবিপ্রধান।

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/এসএস/ডিএম)