ছাত্রলীগ নেতা থেকে উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২০ | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২৫

মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর

শরীয়তপুর-০২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। নানা চড়াই-উৎরাই পার করে নিরলস পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে আজকের এই সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।

এনামুল হক শামীম ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তাছাড়াও তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) এর ভিপি ছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।

এনামুল হক শামীম ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক মামলায় তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি গুরুতর আহন হন।

এনামুল হক শামীম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তার নির্বাচনী এলাকা নড়িয়া সখিপুরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করায় জনগণ তাকে নড়িয়া সখিপুরের উন্নয়নের রুপকার বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে তিনি সৌদি আবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও ভারত সফর করেন। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হাঙ্গেরী এবং চীন ভ্রমণ করেছেন। তিনি পবিত্র হজ পালন করেছেন।

করোনাকালীন পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর অবদান:

করোনা মহামারির সময় মানুষের ঘরে ঘরে চিকিৎসা সেবা এনামুল হক শামীম এমপির উদ্যোগে ডাক্তারের কাছে রোগী নয়, রোগীর কাছে ডাক্তার একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। শহর থেকে এতদূরে ছায়া সুনিবিড় গ্রামীণ জনপদ নড়িয়া সখিপুরের মানুষের জন্য এটি ছিল স্বপ্নের মতোই। অসাধারণ এ উদ্যোগটির উদ্যোক্তা ও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি। কোভিড-১৯ এর প্রথম ঢেউয়ের ভয়াবহতা দেখে পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর একান্ত নিজস্ব ভাবনায় উঠে এসেছিল হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়টি। এমনকি করোনার মহামারিকালে তিনি বলেছিলেন অক্সিজেন না পেয়ে যেন কোনো রোগীকে কষ্ট পেতে না হয়। এজন্য তিনি ঘরে ঘরে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার ও ব্যবস্থাগ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য উপহার পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের ঘরে ঘরে।

ব্যাপক উন্নয়ন করে প্রশংসিত এনামুল হক শামীম :

নড়িয়া উপজেলা ও সখিপুর থানা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-০২ আসন। এই আসনে বিগত সময়ে বেশ কয়েকজন ছিলেন সংসদ সদস্যের দায়িত্বে। চাহিদামাফিক উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি এ অঞ্চলে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ কে এম এনামুল হক শামীম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি পানি সম্পদ উপমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। নড়িয়া-সখিপুরসহ সমগ্র শরীয়তপুরকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষাকল্পে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন। নড়িয়া-সখিপুরে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে চরআত্রা, নওপাড়া, কাঁচিকাটা,কুন্ডেরচর ও উত্তর তারাবুনিয়ায় বিদ্যুৎ প্রদান। নড়িয়া-সখিপুরে বিদ্যুতের জোনাল অফিস স্থাপন এবং সাবস্টেশনগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নতুন সাবস্টেশনের অনুমোদন। প্রত্যেকটি আবেদনকৃত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্তকরণ। ১৫টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ভবন ও দেয়াল নির্মাণ। নড়িয়া সরকারি কলেজ ও হাজী শরীয়ত উল্লাহ কলেজসহ সকল কলেজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিকরণ এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন। নড়িয়া ও সখিপুরে সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো মেরামত ও বর্ধিতকরণ। নড়িয়া ও সখিপুরে প্রায় ৫০০০ গভীর নলকূপ প্রদান। নড়িয়ায় নতুন হাসপাতাল অনুমোদন এবং মুলফৎগঞ্জ হাসপাতাল আধুনিকরণ ও তারাবুনিয়ায় ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চালু। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ডিভিশন, নড়িয়াতে পানি ভবন ও চরআত্রায় হাজী আ. জলিল মুন্সি ডাকবাংলো নির্মাণ এবং নড়িয়া ও সখিপুরে আরও ২টি ডাকবাংলো নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। নড়িয়া পৌরসভাকে 'ক' শ্রেণিতে রূপান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন ও পৌরসভাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্ন্তভূক্তকরণ, যার মাধ্যমে এ বছরই ৫০ কোটি টাকার কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ১১০ জনকে ৩৫ লক্ষ টাকা ও মন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২০০ জনকে ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান। নড়িয়া ও সখিপুরের বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার আলেম-ওলামা ও হাফেজদের প্রায় ৫০০০ পবিত্র কোরআন শরীফ উপহার প্রদান। জয় বাংলা এভিনিউ স্থাপনের মাধ্যমে নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকাকে পর্যটন এরিয়াতে রূপান্তর। উত্তর তারাবুনিয়া থেকে সুরেশ্বরের চরমোহন পর্যন্ত সোনার বাংলা এভিনিউ ও জাজিরা পর্যন্ত রুপসী বাংলা এভিনিউয়ের কাজ চলমান। হাতিরঝিলের আদলে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মূলফৎগঞ্জ সেতু। ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলা উড়াল সেতু, জয় বাংলা ঘাটলা ও দক্ষিণ তারাবুনিয়াতে জয় বাংলা সেতু নির্মাণ এবং প্রায় ২০০টি বাঁশের সাকোকে কাঠের পুলে রূপান্তর। চরভাগা “বঙ্গবন্ধু আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ" কে সরকারিকরণ। চরআত্রা আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজে রূপান্তর এবং রাজনগর ও কাঁচিকাটায় উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকরণ।

নড়িয়াতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের জন্য ভবন নির্মাণকাজ চলমান ও সখিপুরে আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয়, ১১টি ইউনিয়নে স্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয় নির্মাণ এবং বাকী ইউনিয়নগুলোতেও প্রক্রিয়াধীন। নড়িয়ায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন এবং সখিপুরে প্রক্রিয়াধীন। সখিপুর উপজেলা গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে চলমান। প্রায় ৭০০টি মসজিদ-মাদ্রাসা ও ২৫টি মন্দিরে নগদ অর্থ ও অনুদান প্রদান। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ক্রীড়া সামগ্রী প্রদান ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সহায়তা প্রদান। নড়িয়া ও সখিপুরে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম ও সখিপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, এএসপি সার্কেল অফিস নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। নড়িয়ায় উপজেলা কার্যালয়, ভূমি অফিস নির্মাণ ও মডেল মসজিদ নির্মাণ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নড়িয়ায় ৯০০ এবং সখিপুরে ৬০০, সর্বমোট ১৫০০ পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান এবং “জমি আছে ঘর নেই” প্রকল্পের আওতায় ২০০ পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকার দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রদান। ২১জন আলেম-ওলামা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ অর্থায়নে পবিত্র ওমরাহ্ হজে প্রেরণ। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসগুলোতে উপহার প্রদান। মাদক, ইভটিজিং ও সকল অপরাধ নির্মূলে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স।

কেউ যদি তাকে যে কোনো ব্যাপারে ম্যাসেজ দেন তার উত্তর দেন সঙ্গে সঙ্গে। সাধারণ মানুষ সবাই তাকে ফোন করতে পারেন। যে কেউ ফোন করলে তিনি তা ধরেন এবং সাথে সাথে সে ব্যাপারে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসেন। নিজ নির্বাচনী এলাকা একেবারে শান্তিপূর্ণভাবে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলেছেন তিনি। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছেন তিনি। শেখ হাসিনার প্রশ্নে, নৌকার প্রশ্নে তিনি আপস করেন না।
উল্লেখ্য, উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী আবুল হাসেম মিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা প্রয়াত বেগম আশ্রাফুন্নেছা রত্নগর্ভা মা খেতাব প্রাপ্ত। তার মেজো ভাই বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি।

(ঢাকাটাইমস/০৭ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)