নাহিম রাজ্জাকে চাঙ্গা শরীয়তপুর-৩ আসন

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৪

মো. মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর
নাহিম রাজ্জাক এমপি

শরীয়তপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত শরীয়তপুর-৩ আসনটি ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন শরীয়তপুর-৩ আসনের নির্বাচনী এলাকার রাজনৈতিক ও দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের স্মৃতিবিজড়িত এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

এ আসনে রয়েছে ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা, ডামুড্যা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং গোসাইরহাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি প্রস্তাবিত পৌরসভা। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে এটিই ছিল জেলার সর্ববৃহৎ নির্বাচনী এলাকা।

১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলখ্যাত ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সখিপুর থানাকে শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে কেটে নিয়ে ২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

যেসব উন্নয়ন কাজ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

বর্তমান সরকার উন্নয়ন বান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায়ও শরীয়তপুর-০৩ ডামুড্যা, গোসারহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা ও উন্নয়নে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখছেন আলহাজ্ব নাহিম রাজ্জাক এমপি। শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে, ডামুড্যায় আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক নার্সিং ইন্সস্টিউট, জাতীয় বীর আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, কনেশ্বর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন নির্মাণ, আলহাজ্ব ইমাম উদ্দিন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন, ডামুড্যা উপজেলাধীন ইদ্রিস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন চারতলা ভবন। গোসাইরহাট উপজেলাধীন ইদিলপুর ইউনিয়নের ইকরকান্দি দাখিল মাদ্রাসার নতুন ভবন, ডামুড্যা উপজেলাধীন কনেশ্বর ইউনিয়নে কনেশ্বর এস. সি. এডওয়ার্ড ইন্সস্টিটিউশন নতুন চারতলা ভবন।

গোসাইরহাট উপজেলার সামন্তসার ইউনিয়নের সামন্তসার উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন চার ভবনের উর্ধমুখী ভবনের কাজ, নারায়নপুর ইউনিয়নের ৬৫ নং বাঐকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ, ডামুড্যায় উপজেলায় প্রস্তাবিত আব্দুর রাজ্জাক স্পোর্টিং একাডেমি। এছাড়া ভেদরগঞ্জ উপজেলায় প্রস্তাবিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, গোসাইরহাট উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের ফলক উন্মোচন, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় প্রস্তাবিত আওয়ামী লীগ অফিস। আব্দুর রাজ্জাক ছাত্রবাস, গোসাইরহাট উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন। এছাড়াও আরো অনেক উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম চলমান।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের পাঁচ মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- বর্তমানসহ টানা তিনবারের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পারভীন হক সিকদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির মহিলা বিষয়ক সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত এমএ রেজার সহধর্মিণী সৈয়দা শাহজাদী ফরিদা রেজা নূর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে।

তবে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রাণ নাহিম রাজ্জাক। এককথায় বলা চলে- নাহিম রাজ্জাকে চাঙ্গা শরীয়তপুর-০৩ আসন। তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। যার ফলে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। বিএনপির সমর্থকেরাও এখন নাহিম রাজ্জাকের উন্নয়নকে স্বীকার করছেন। বিগত কয়েকবারের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক তার পেছনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন।

নাহিম রাজ্জাকের পরিবার পরিচিতি:

নাহিম রাজ্জাকের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে। তার পিতা আব্দুর রাজ্জাক (রাজনীতিবিদ) ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। আব্দুর রাজ্জাক ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন নিউক্লিয়াসের তিনজন গঠনকালীন সদস্যের একজন এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং যুদ্ধের সময় তিনি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭০ এর প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। তিনি স্বাধীন বাংলার পাঁচবারের সংসদ সদস্য, ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ছিলেন। নাহিম রাজ্জাকের মা, ফরিদা রাজ্জাক ছিলেন একজন শিক্ষক এবং সমাজকর্মী। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নাহিম রাজ্জাক এবং মালেয়া হোসাইন দম্পতির দুজন পুত্রসন্তান রয়েছে।

নাহিম রাজ্জাকের রাজনৈতিক জীবন:

শিক্ষা জীবন শেষ করে নাহিম যুক্তরাজ্যে মার্কেটিং বিষয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্টে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর গ্রেনেড হামলায় তার বাবা আব্দুর রাজ্জাক (রাজনীতিবিদ) গুরুতর আহত হন। এরই প্রেক্ষিতে নাহিম যুক্তরাজ্যের কর্মজীবনে ইস্তফা দিয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং রাজনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। ৩ বছরের রাজনৈতিক কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি শরীয়তপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন। ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর তার বাবার মৃত্যুর পর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সালের  ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে তিনি ৪০বছরের কম বয়সে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিরল গৌরব অর্জন করেন। নিজে তরুণ আইনপ্রনেতা হওয়ার কারণে নাহিম বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশের উন্নতির জন্য তরুণ প্রজন্মকে মূলধারার রাজনৈতিক আইনপ্রনেতাদের সাথে যুক্ত করা উচিত। এই বিশ্বাস থেকেই পরবর্তীকালে সারাদেশের তরুণ প্রজন্মকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে এবং আইন প্রনয়নে তাদের মতামতকে তুলে ধরতে গঠিত হয় ‘ইয়ং বাংলা’। তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে তরুণ প্রজন্মের উন্নতির সাথে যুক্ত আছেন। তিনি শরীয়তপুরের ১০ টিরও বেশি স্কুল ও কলেজের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন এবং শিক্ষার প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তরুণ প্রজন্মের উন্নয়নের অংশ হিসেবে তিনি ২০১৫ সালে ‘ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (E-commerce Association of Bangladesh) গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। বর্তমানে তিনি সংগঠনের অন্যতম পরামর্শদাতা হিসেবে ই-কমার্সকে বাংলাদেশ ও বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তন এই শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নাহিম রাজ্জাক জলবায়ু পরিষদ, বাংলাদেশের আহবায়ক হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও কাজ করে যাচ্ছেন। এই পরিষদ দাতব্য সংস্থা হিসেবে জৈব জ্বালানী ব্যবহার কমাতে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারে উদবুদ্ধ করতে সারা বিশ্বের আইনপ্রনেতাদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)