এডিসি হারুনের ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৬ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০২

জাফর আহমেদ, ঢাকা টাইমস

পুলিশের হাতে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম মারা গেছেন কি না, শেষ মুহূর্তে এই আতঙ্ক বিরাজ করছিল পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঝে। শাহবাগ থানার একটি কক্ষে নিয়ে শনিবার রাতে টানা প্রায় ১০ মিনিট অস্ত্রের বাট দিয়ে পেটানোর পাশাপশি বুটজুতা পরে পারানো হয় নাঈমকে। প্রথমে এডিসি হারুন বেধড়ক পেটান। পরে হারুনের সঙ্গে যোগ দেন আরও ৮-১০জন পুলিশ সদস্য। সবাই মিলে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয় তিনজনের ওপর। অন্যদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর আহত করা হয় নাঈমকে।

রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ কর্তৃক এমন ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ভয়াবহতা কথা ঢাকা টাইমসের কাছে তুলে ধরেছেন নির্যাতনের শিকার হওয়া শরীফ আহমেদ মুনিম। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, নাঈমকে গুরুতর অবস্থায় প্রথম কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 

নারীঘটিত বিষয়ে শনিবার রাতে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমকে শাহবাগ থানায় নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়। এরমধ্যে নাঈমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মুখমণ্ডল মারত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে। পর তাদেরকে কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শরীফ আহমেদ বলেন, আমি একটু দূরে ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমাকেও মারছে। কিন্তু নাঈমকে প্রচুর মারধর করছে। নাঈম এডিসি হারুনের পা ধরে বহুবার মাফ চাইছে। কিন্তু তাকে মাফ করেনি। এমনকি মাফ চেয়ে হারুনের পা ধরে বসেছিল। তখনি নাঈমের পেটে আঘাত করে। একপর্যায়ে প্রচুর রক্তাক্ত হয়ে পড়েন এবং নাঈম জ্ঞান হারান। তখন তাকে পেটানো বন্ধ করা হয়।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে শরীফ আহমেদ মুনিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, মারধর করার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় মেজেতে পড়েছিল নাঈম। কিছু সময় পর আসেন রমনা থানার এডিসি শাহীনশাহ, শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ, এডিসি রিপন, মাকুল। তারা এই অবস্থা দেখে অবাক এবং আতঙ্কিত হয়ে যান। মারধর করা হয়েছে শাহবাগ থানার পরিদর্শক তদন্তের কক্ষে। আমাদেরকে মারধর করার সময় ওসি রুমে ছিলেন না। তারা নাঈমের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যান। তাই আতঙ্কিত অবস্থায় নাঈমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এডিসি মুকুল তার ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে দ্রুত নিয়ে গিয়ে তিনি নিজেই কাকরাইলে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শরীফ বলেন, আতঙ্কিত হয়ে তারা নিয়ে যায় কারণ তারা ভাবছে নাঈম মারা গেছেন। মারা গেছে কি না- এই আতঙ্ক ও ভয়ে পুলিশের সদস্যরা নাঈমকে গাড়িতে দ্রুত তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিকে থানার বাইরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ভিড় করছিল। নাঈম এমন আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেটা যেন বুঝতে না পারে, সেজন্য ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে যায়। রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন নাঈমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়।

নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনাটি ঘটে ডিএমপির শাহবাগ থানার পরিদর্শক নূর মোহাম্মদের অফিস কক্ষে।

এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এটা যে করেছে, তিনি পুলিশের হোক বা যেই হোক না কেন, অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হবে। কেন করেছে, কী করেছে, আমরা জিজ্ঞাসা করব। তার ভুল কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১০ সেপ্টেম্বর/জেএ/কেএম)