চট্টগ্রামে চার মেগাপ্রকল্পের উদ্বোধন অক্টোবরে

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২৬

এম হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে চলছে ৪ মেগাপ্রকল্পের উন্নয়ন কাজ। নানা ভোগান্তি শেষে এখন নতুন আলো দেখাচ্ছে এই চার প্রকল্প। যা অক্টোবরের মধ্যেই চালু করতে চায় সরকার। নির্বাচনের আগেই এসব প্রকল্প চালু হলে চট্টগ্রাম হবে যোগাযোগের নতুন সূচনা। পাল্টে যাবে চট্টগ্রামের চেহারা।

এমন মত প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনেরা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমূদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন ও চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

প্রকল্পগুলোর পরিচালকদের তথ্যমতে, এসব প্রকল্পের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। শেষের পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মাতারবাড়ি গভীর সমূদ্রবন্দর প্রকল্পের কাজও। যা অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন যানবাহন চলাচলের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ৩৫ ফুট প্রশস্ত এবং ১৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দুটি টিউব ১১ মিটার ব্যবধানে তৈরি করা হয়েছে। যাতে ভারী যানবাহন সহজেই টানেলের মধ্য দিয়ে চলতে পারে। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪০ কিলোমিটার। যার সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের এপ্রোচ রোডের পাশাপাশি ৭৪০ মিটারের একটি সেতু রয়েছে, যা মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।

প্রকল্পের তথ্যমতে, টানেলটি চট্টগ্রাম বন্দরকে সরাসরি আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করা ছাড়াও কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং দুরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে আনবে। এই টানেলে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে। টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হলে টোল দিতে হবে। যানবাহনের শ্রেণিভেদে টোল ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা বলে সূত্র জানিয়েছে।

১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।

গত ১৪ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে টানেলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর

আগামী আক্টোবর মাসে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে কক্সাজারের মহেশখালীতে নির্মিত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। আর এই সমুদ্র বন্দর ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ।

তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে গভীর সমুদ্রবন্দর আছে সিঙ্গাপুরে। যে কারণে মাদারভ্যাসেলগুলো ওখানেই ভিড়ে। ওখান থেকে ফিডার জাহাজে করে এখানে আনতে হয়। এতে অনেক খরচ হয়। এ খরচতো ইনপোর্টাররা পকেট থেকে দিবে না। তাই চাপটা পড়ে ভোক্তাদের ওপর। মাতারবাড়ি বন্দর হলে ইনপোর্টারদের খরচ কমে যাবে, জিনিসপত্রের দামও কমে যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক ঢাকাটাইমসকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে সাধারণত মাত্র ৯ দশমিক ৫মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট জাহাজ বার্থ করতে পারে। তবে সম্প্রতি ১০মিটার ড্রাফটের একটি জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে। কিন্তু এসব জাহাজ ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৪০০ টিইইউএস কন্টেনার বহন করতে পারে। একটি মাদার ভেসেলের ধারণক্ষমতা ৮০০০ থেকে ১০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে ৮ হাজার টিইইউসের বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে। সহজেই আসতে পারবে বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে।

বন্দর সূত্র জানায়, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এখন দৃশ্যমান। দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ধলঘাট এলাকায়। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে ১ হাজার ৩১ একর জায়গার নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দরটি। প্রকল্পের দুটি অংশ। একটি হলো বন্দর নির্মাণ এবং অপরটি সড়ক ও জনপথের আওতাধীন সড়ক নির্মাণ। প্রকল্পের আওতায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস জেটি এবং ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কনটেইনার জেটি নির্মিত হবে। জেটি নির্মাণ কাজ শেষ করতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। তখন ১১ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন্দর।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের দুই টার্মিনালে মোট ৭৬০ মিটার দীর্ঘ জেটি নির্মাণ করা হবে। সেখানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ জেটিতে ভিড়বে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার জাহাজ। আর ৩০০ মিটার দীর্ঘ জেটিতে ভিড়বে ২০০ মিটার লম্বা সাধারণ জাহাজ। নৌপথে এখন পানির গভীরতা ১৬ মিটার। এই গভীরতা ব্যবহার করে ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার (সিডিএল) গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণ শেষ হয়েছে। এছাড়াও এপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পাশে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।

২০২৬ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো নামানোর এই টার্মিনাল। ইতিমধ্যে প্রকল্পের আওতায় মাতারবাড়ি টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এতে চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে বলে জানান সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. জাকির হোসেন।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন

আগামী অক্টোবর মাসেই পর্যটন নগরী কক্সবাজার যাবে ট্রেন। এ লক্ষ্যে চলছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের শেষ পর্যায়ের কাজ। ইতোমধ্যে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ট্রেনের ছয়টি বগি এবং একটি ইঞ্জিন। যেগুলো গত এক মাস ধরে অবস্থান করছে পটিয়া রেলওয়ে স্টেশনের সামনে।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাট ব্রিজের কাজ দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানালেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা। তিনি বলেন, ব্রিজটি মজবুত করা হচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কার শুরু হয়। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সংস্কারকাজের জন্য সব ধরনের যানবাহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। সংস্কার শেষ হলে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। সেতু পার হওয়ার সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। তবে কক্সবাজারগামী ইঞ্জিনের ওজন হবে ১২-১৫ টন। ট্রেনের গতি হবে সর্বোচ্চ ৮০-১০০ কিলোমিটার।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজারে ৯২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে ছোট-বড় প্রায় সবকটি ব্রিজ-কালভার্ট। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৮৮ শতাংশ। চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার টার্গেট আছে। আগামী অক্টোবরেই প্রকল্পের উদ্বোধনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।

প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯২ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

অক্টোবর মাসের মধ্যেই যানচলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে উদ্বোধনের তোড়জোড়।

এক্সপ্রেসওয়েটিতে ওঠা-নামার জন্য বিভিন্ন স্থানে ১৪টি র‌্যাম্প সংযোজনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটিও নির্মাণ হয়নি। যে কারণে উদ্বোধনের পরও এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে কতখানি ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আগামী অক্টোবরে দেশের একমাত্র টানেল উদ্বোধনের কথা রয়েছে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহনের চাপ বাড়বে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে টানেলের সাথে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর চিন্তা করছি।

প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, শুরুর দিকে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ২৪টি র‌্যাম্প থাকার কথা থাকলেও এখন হবে ১৪টি। এখনও র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। উদ্বোধনের পর র‌্যাম্প নির্মাণে কাজ শুরু হবে। তবে এখন লালখান বাজার থেকে যেসব যানবাহন বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াত করবে শুধু সেগুলো উঠতে পারবে। মাঝখানে নামার সুযোগ থাকছে না।

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকল্পের অধীনে ৩৯০টি পিলার, ৪০০টি গার্ডার থাকার কথা। এরমধ্যে ৩৮৯টি পিলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটি পিলারের কাজ বাকি আছে। ৩৮৯টি গার্ডার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান আছে। প্রাথমিকভাবে অক্টোবরেই উদ্বোধনের টার্গেট রাখা হয়েছে।

চউক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। একই সময়ে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। চউকের এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র‌্যাংকিং।

(ঢাকাটাইমস/১৩ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)