বাজারে অভিযানও চলছে, নৈরাজ্যও চলছে

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

*কাদের খুদে বার্তায় বেড়ে যায় পণ্যের দাম, শনাক্ত করতে পারছে না ভোক্তা অধিদপ্তর

*আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম-তেল-আলু-পেঁয়াজ

*মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে নইলে বাজার আরওসামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়বে: গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব

*আমাদের অভিযান চলছে, বাজারে অরাজকতার বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছি: এইচ এম সফিকুজ্জামান, ডিজি, ভোক্তা অধিদপ্তর

বাজারে সিন্ডিকেটের ব্যাপক দৌরাত্ম্যে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে তার লাগাম টানতে ডিম, তেল, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু পরের দিন সেই দামে বিক্রি হয়নি এই পণ্যগুলো। এরপর সিন্ডিকেট ভাঙতে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

তবে মূল যে সিন্ডিকেট- যাদের মোবাইল বার্তায় মুহূর্তে বেড়ে যায় পণ্যের দাম- তাদের লাগাম টানতে পারেনি এসব অভিযান। তাদের সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছে অভিযানকারীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল হোতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কখনোই পণ্য বিক্রি হবে না। তারা মোবাইলে বার্তা পাঠালেই সারা দেশে একযোগে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাদেরকেই প্রথম শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নইলে ক্রেতারা আরও জিম্মি হয়ে পড়বে।

গত বৃহস্পতিবার দাম বেধে দেয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত- এই তিন দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে- বেধে দেওয়া দামে কোনো পণ্যই মিলছে না। বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।

বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালাতে বাজারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সাবধান হয়ে যাচ্ছেন বিক্রেতারা। তারা দোকান বন্ধ করে পালাচ্ছেন। অভিযানকারীরা চলে গেলে ফের বিক্রি শুরু হয় অতিরিক্ত দামে।

এসব দোকানদারদের অভিযোগ, তারা যাদের কাছ থেকে পণ্য কিনেন- সেই পাইকার এবং আমদানিকারকদের কাছ থেকে পন্য কিনতে হয় সরকারি দামের অতিরিক্ত দামে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এইচ এম সফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। অভিযান চলছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী, প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা, পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, আলু ৩৫ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৬৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও, আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ভাটারা বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় অতিরিক্ত দাম নেয়ায় জরিমানা আদায় করা হয় একটি দোকানে। সেই সঙ্গে বাকিদের সতর্ক করা হয়।

অভিযানের বিষয়ে সংস্থাটির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মাগফুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সেই নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করেছিলেন এক বিক্রেতা। আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি। কাজেই সে যেন সরকারের নির্ধারিত মূল্য মেনে পণ্য বিক্রি করেন, তাই আমরা তাকে জরিমানা করেছি।

সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি করায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় সেই ব্যবসায়ীকে। কিন্তু এতে তার ঘোর আপত্তি। কারণ, পাইকারি বাজারে তাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৪০ টাকা ৫০ পয়সা দরে আলু কিনেছি। তাই বিক্রি করছি ৪২ টাকায়। আমার কাছে ভাউচারও রয়েছে। এর পরও আমাকে জরিমানা করা হয়েছে।’

খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কিনতেই হচ্ছে ৪১ টাকায়। বাধ্য হয়েই তাই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। আরেকজন আলু বিক্রেতা দাবি করেন, আমরা প্রতি কেজি আলু ৩৯ টাকা ৫০ পয়সায় কেনা পড়ছে। কোল্ড স্টোরেজ থেকে বলা হচ্ছে, আপনারা এই দামে পছন্দ হলে নেন, না হলে বাদ দেন।

নতুন নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী, প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা, পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, আলু ৩৫ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটার ১৬৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও, আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।

অন্যদিকে বাড়তি দামে নাভিশ্বাস ক্রেতার। তারা মনে করছেন, খুচরা বাজারে নয়, কারসাজি হচ্ছে পাইকারি বাজারে। এক ক্রেতা বলেন, পাইকারিতে ডিমের দাম ১২ টাকা। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে সেটি কেউ মানছে না।

এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা থেকে ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪ টাকা থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর থেকেই বাজারে নতুন দর কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। এই তিন পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই।

এছাড়া একই দিন সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দামও কমানোর ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। পরে সেদিন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়।

এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য কমায় দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমানো হয়েছে। ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে ১৬৯ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮২৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম ৪ টাকা কমিয়ে ১২৪ টাকা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশ-ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নইলে বাজার আরওসামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়বে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/আরআর/কেএম)