ফুটবল প্রশ্নে কেন ইমরুল হাসান আলাদা?

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০০

আয়শা এরিন

অনেক দায়িত্ব নিয়ে  অসম্পূর্ণ রাখার চেয়ে ভাল, ছোট পরিসরের কাজটিকে পরিপূর্ণ কিংবা পরিপাটি আয়োজনে নিষ্পত্তি করা------এমন কাছাকাছি মতবাদে সিক্ত হয়েছিলেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কথার ফুলঝুরি, অহেতুক মিছে স্বপ্ন দেখানোর অপচেষ্টা----এমন বাস্তবতা পরখ করেছে ফুটবলভক্তরা। বারবার করে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে হলেও দেশিয় ফুটবলের শীর্ষ অভিভাবকেরা সফল হওয়ার  চেষ্টা করতে পারতেন। এমন ছোট্ট একটা চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে সাফ ফুটবলে গেল একযুগে একাধিক শিরোপা জেতার মাহেন্দ্রক্ষণ ধরা দিলেও প্রাপ্তির সড়কে বাংলাদেশ পথিক হতে পারত। অতঃপর ধীরে ধীরে এশিয়ার শক্তি হিসাবে একদিন দাঁড়িয়ে যেতে পারলেই তো, ব্যাস। কিন্তু তেমন করে হয়নি।

এশিয়া ফুটবলে এগোচ্ছে, নতুন নয়। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের ফুটবল এখন সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়েছে। ক্লাবভিত্তিক ফুটবলে সৌদি আরব, কাতার, আরব আমিরাত নতুন বার্তা দিচ্ছে। এমনিতে আগ হতেই দক্ষিণ কোরিয়া, জ্যাপান বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রায় দুই যুগের মত করে হবে, তাঁরা তাঁদের জাত চেনাতে সক্ষম হয়েছিল। লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাংলাদেশেরও উচিত ছিল, ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানামুখী বাস্তবমুখী পদক্ষেপ হাতে নেয়া। 

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় ফুটবল এমন একটি আবেগ, যা জনশ্রেণি কর্তৃক ধারণকরত উচ্ছ্বাসের সবিশেষ একটি রঙ, মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, গোল ! গোল করে জিততে, আবার নির্দিষ্ট একটি গন্তব্যে পৌঁছুতে তথা প্রতীকী কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে যেতেও  সেই GOAL ! তেমন গোলের সন্ধান পেতে জাতীয় পর্যায়ের কথিত ফুটবল সংগঠকদের দায়িত্ব পেতে থাকা ও  ফুটবল ফেডারেশনের লক্ষ্যহীন লক্ষ্য, বাংলাদেশ কে এই বিশ্বে ফুটবলের ছোট দেশ করেই রেখেছে।

সাংস্কৃতিক ধারাভাষ্যে গেলে বলা যায় যে,  ছোট থেকে আজ ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে ফুটবলের মাঝারি মানের শক্তি হিসাবে পৌঁছে যাওয়া উচিত ছিল। যদিও বৈশ্বিক ফুটবলের জনপ্রিয়তার জ্বরে প্রভাবিত হয়ে আমাদের দেশের ছেলেরা তাঁদের সেরাটা দিয়ে হালে খেলতে চাইছে। সমান তালে লড়তে চাইছে। এই লড়তে চাইবার লড়াকু স্বভাব তৈরি হত না, যদি দেশের ক্লাব ফুটবলে কয়েকটি পেশাদার ক্লাবের জন্ম না হত। ইমরুল হাসানের মত নেতৃস্থানীয় সংগঠক তৈরি না হত। তাঁর নেতৃত্বে বসুন্ধরা কিংসের মত ক্লাব, বাংলাদেশের ফুটবলের দৃশ্যপট বদলে বিপ্লব করতে পেরেছে বলে মনে করার সুযোগ আছে। যেমন, ধারণা করা হচ্ছিল, তরফদার রুহুল আমিনের সাইফ স্পোর্টিংও হয়তো পারবে। কিন্তু, হতাশ হতে হয়েছে। তিনি নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ধৈর্য সক্ষমতায় অবস্থান নিতে পারেন নি।

বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অদম্য মানসিকতার লড়াকু সংগঠকের প্রয়োজন। যার বা যাদের ধ্যানজ্ঞানে ফুটবল থাকতে হবে। মাঠে যেয়েও খেলোয়াড়দেরকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, ক্লাবগুলোকে পেশাদার করার নিমিত্তে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে, দেশের ফুটবলকে চাঙ্গা রাখতে তৃণমূল ফুটবলকে ব্যস্ত রাখতে হবে, চালিয়ে যেতে হবে জাতীয় লীগ, ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের প্রবর্তন করতে হবে---- এমন কয়েকটি দিকে মনযোগ রাখা গেলে সফলতার সিঁড়ি ধীরে ধীরে প্রস্তুত হবে বলে মনে করার সুযোগ আছে। এমন সবকিছুই এখন দেশে একজন ফুটবল সংগঠক ইমরুল হাসানের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। তাঁর থেকে অন্যরা পিছিয়ে পড়ছেন। সে কারণেই তিনি আলাদা ফুটবল চরিত্রই।

বসুন্ধরা কিংস এখন খেলার মানের বিচারে দেশের অপরাপর ক্লাবগুলোর চেয়ে ঢের এগিয়ে। তাঁরা এশিয়ায় নিজেদেরকে প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে। দেশের ফুটবলে বিবর্তন প্রত্যাশী হয়ে বসুন্ধরার মত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকর্তৃক সাংস্কৃতিক পর্যায়ের উদ্যোগে সবচাইতে বড় চমকের নাম ইমরুল হাসান। যার ক্ষুরধার নেতৃত্ব ও পরিশ্রমে ক্লাব এবং দেশের ফুটবল সঠিক কক্ষপথে পৌঁছাতে পারে বলে মনে করার সুযোগ আছে। 

কথায় আছে, আগে স্বপ্ন দেখতে হয়, অতঃপর বাস্তবায়নও করতে পারবে।  গভীর বাস্তবতায় ইমরুল হাসান ও তাঁর বসুন্ধরা ক্লাব ম্যানেজমেন্ট খুবই পরিপাটি বিশিষ্টতাকে সঙ্গি করে এগোচ্ছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে। এমনটি চলতে থাকলে খুব বেশী দূরে নেই যে, বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে। তবে সত্যটা বলতে হবে। ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ফুটবল ফেডারেশনের ভাল ও মন্দ উভয় কিছুর আলোচনা ও সমালোচনাও বাড়াতে হবে। লক্ষ্য একটাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে শেখ কামালের মধ্যে ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল, তা পূরণে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠিগত উদ্যোগে যেতেই হবে।  বার্ট্রান্ড রাসেলের একটি মতবাদ ছিল। তা হল,  অপ্রত্যক্ষভাবে মতৈক্যে না পৌছে ভিন্নমত পোষণ করো। আমার মনে হয়, ফুটবলের স্বার্থে গা ধোঁয়া ব্যক্তিবর্গের ধীরে ধীরে কার্যকর আলাপচারিতায় যেয়ে ফুটবলের উন্নতিতে কথাও বলতে হবে----অতি অবশ্যই সামাজিক সৌন্দর্য বহাল রেখে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী নির্মাতা।