এস. এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার: এক অকুতোভয় শিল্পী ও শব্দসৈনিকের কিছু প্রাসঙ্গিক সৃষ্টির সাতকাহন

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৯ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১১

সঞ্জয় রায়

‘আমি গাইনা বন্ধু আর গান শখ করে, 
সময়ের ইতিহাস লিখে রাখা এই কাজ-
আমাকেও একটু করতে হবে,
 ঘুমন্ত মানুষেরা একটু চেতন হলে
 সমাজ আরেকটু এগিয়ে যাবে।’

- ঠিক এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই সময়ের ইতিহাসকে পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে আপন সৃষ্টিতে ধরে রাখার দায়বদ্ধতায় একের পর এক যুগোপযোগী গান, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা ইত্যাদি রচনা করে চলেছেন বর্তমান প্রজন্মের এক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব এস. এম. জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তিনি একাধারে যেমন একজন সুপ্রশিক্ষিত শিল্পী, তেমনি একজন কবি, গীতিকার, সুরকার, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। পাবনা জেলার সোনাহারা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এই সন্তান তাঁর শিল্পস্বত্তার বোধ থেকেই বিগত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে দেশের ও সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজনে তাঁর অনুপম সৃষ্টিশীলতায় কখনো সময়োপযোগী গানে, কখনো কবিতার ভাষায় অথবা যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ বা নিবন্ধের মাধ্যমে শ্রোতা ও পাঠকদের ঋদ্ধ করে চলেছেন। 

 

৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধে চিহ্নিত অপরাধীদের বিচারের দাবীতে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রক্তচক্ষুর ভ্রুকূটিকে উপেক্ষা করে অকুতোভয় এই শিল্পী সোচ্চার হয়েছিলেন তার ‘যুদ্ধাপরাধী’ গানটি নিয়ে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বর প্রকম্পিত হয়েছে তার গাওয়া ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’ গানে। সমাজের বিভিন্ন অবক্ষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় তার কণ্ঠে ধ্বণিত হয়েছে মাদকবিরোধী গান। গেয়েছেন মানবতার গান। নির্মাণ করেছেন অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা রোধে এবং নৌভ্রমণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গানে গানে ভিজুয়াল তথ্যচিত্র। তার লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধে উপজীব্য হয়েছে স্বদেশ প্রেম, দেশীয় লোকজ সংস্কৃতির সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোর ও তরুণদের মনস্তাত্ত্বিক অবনমন ও তার হিতসাধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র। বারবার কলম ধরেছেন একটি দূষণমুক্ত সংস্কৃতিনির্ভর অসাম্প্রদায়িক সামাজিক গঠনতন্ত্রের স্বপ্ন নিয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে জাতিকে উপহার দিয়েছেন ‘বাইগার থেকে বঙ্গবন্ধু’ ও ‘এক উত্থিত তর্জনী’ শীর্ষক দুটি কালজয়ী গান, যা ইতিমধ্যেই বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমের পত্র-পত্রিকায় নিজের লেখনীতে তিনি বিভিন্ন সংস্কারমূলক প্রস্তাবনা যেমন- সাংস্কৃতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীতা, শিক্ষাকার্যক্রমে সঙ্গীত তথা সাংস্কৃতিক শিক্ষাকে বাধ্যগতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা, তারুণ্যের সাংস্কৃতিক উত্তরণের মাধ্যমে অপসংস্কৃতির মোকাবেলা করার অনিবার্যতা ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমরা তার প্রকাশিত বিভিন্ন প্রস্তাবনা রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত হতে দেখেছি।

 

পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শে বেড়ে ওঠা এই অন্তর্মুখী মানুষটি ইতিমধ্যেই দুটি কাব্যগ্রন্থসহ বেশ কিছু বই প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হল ‘বঙ্গবন্ধু: বিশ্বরাজনীতির আধ্যাত্মিক কিংবদন্তি’ বইটি। জাতির পিতার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণের বাইরে গ্রন্থটিতে প্রকাশ পেয়েছে তার অতিলৌকিক ক্ষমতার বিভিন্ন কার্যকারণ ভাববিশ্লেষণ। বলা বাহুল্য, গ্রন্থটি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সবার কাছে এই মহান নেতার এমন একটি বিশেষত্ব তুলে এনেছে, যা ইতিপূর্বে কেউ হয়তো চিন্তাও করেন নি।

 

সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি একসঙ্গে তিনটি স্বদেশ পর্যায়ের সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে উদ্দীপনামূলক গান নিয়ে কাজ করছেন শিল্পী এস. এম. জাহাঙ্গীর আলম সরকার। 

‘সময়ের প্রয়োজনে 

আবার নতুন করে যুদ্ধ করতে হবে, 

হুমকির মুখে আজ স্বাধীনতা
 
ঐ শত্রুকে রুখে দিতে হবে।’


- দেশের ও বিশ্বের এমন চরম সঙ্কটাবস্থায় আরও একবার গণসঙ্গীতের শক্তির পরীক্ষা নিতেই তার এমন প্রয়াস। 


‘কতদিন হয়ে গেল দেখছি না তোমরা 

লিখছনা কেউ তো- স্বদেশ প্রেমের গান,

কণ্ঠ চিতিয়ে আর গাইছ না কেউ তো 

স্বাধীনতার চেতনায় জয় বাংলার জয়গান।’


-স্বদেশ প্রেমের এমন উদ্দীপনাময় কথামাল্যে সাজানো তার ২য় গানটিও সুরে, গায়কীতে একটি অসাধারণ ভাব প্রকাশ করবে, তা নিয়ে আমরা আশাবাদী।

‘সময় হয়েছে কবিতা লেখার- সময়ের প্রয়োজনে

সময় হয়েছে ঘুরে দাঁড়াবার- জাতির ক্রান্তিকালে।

যে গান কবিতা লেখা হয়েছিল ভাষার আন্দোলনে

যে বাণীর টানে অস্ত্র ধরেছি স্বাধীনতা সংগ্রামে,

ভুলিনি তো সেই ইতিহাস- তাই আবার নতুন করে

রুখে দেব ঐ আগ্রাসন, যা রুখেছি একাত্তরে।’


- এমন কথায় সাজানো তার এবারের ৩য় গানটিও নির্ভীক বাণীর সাবলীলতায়, অপূর্ব সুরে ও সঙ্গীতায়োজনে এক অনন্য মাত্রা লাভ করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির আগ্রাসনকে রুখে দিতে বরাবরের মতই এই তিনটি গানও দেশের সাধারণ মানুষদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে, এই আশা দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষই করে। সৃষ্টির এই ধারা অব্যাহত থাকুক, আলোকিত হোক তাঁর আগামী প্রতিটি দিন- পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার কাছে এই কামনা করি।

 

লেখক: কবি ও গীতিকার।